অক্টোবর ৩, ২০২৪ ১০:৩০ অপরাহ্ণ

বর্ণাঢ্য আয়োজন হল সিএমপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে

দিনভর বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠার ৪৪তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। গতকাল সোমবার নগরীর দামপাড়া সিএমপি সদর দপ্তর ও পুলিশ লাইন্স মাঠে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি ছিলেন। পুলিশ লাইন্স মাঠে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে, স্টল ও পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন, ফাঁড়ি ও ব্যারাক উদ্বোধন, কেক কাটা ও সুধি সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালায় আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।
সিএমপি সদর দপ্তরে বিকালে আয়োজিত সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রযুক্তির কারণে অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে মন্তব্য করে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম, মানবপাচার, মানি লন্ডারিংসহ নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করেছি। বিডি পুলিশ হেল্পলাইন এপ্লিকেশন চালু করা হয়েছে। সিএমপিতে সিটিজেন ইনফরমেশন ব্যাংক সিস্টেম চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে এই শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলিষ্ঠভাবে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। অপরাধীদের তথ্য দ্রুত পাওয়ার জন্য সিডিএমএস চালু করা হয়েছে।
প্রযুক্তির অবাধ ও বহুমুখী ব্যবহারে সৃষ্ট অপরাধের বহুমাত্রিকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা ইন্টেলিজেন্স ও টেকনোবেইজড পুলিশিং জোরদার করেছি। বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করছি। ডিজিটালাইজেশনের যে চ্যালেঞ্জ- সাইবার ক্রাইম, মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ইত্যাদি নতুন ধরনের অপরাধগুলো আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। সারাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এসব অপরাধ মোকাবিলা করে দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে এসেছি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের ঈর্ষণীয় সাফল্য বর্তমানে বিশ্বে রোলমডেল। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে তিন হাজার মার্কিন ডলারে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এরপরও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। প্রতিনিয়ত যে চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের সামনে আসছে, সেসব পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবিলার জন্য আমাদের কার্যক্রমকে আরও সুবিন্যস্ত করছি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের দক্ষ ও মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, সিএমপি সবসময় উদ্ভাবনী ও গণমুখী পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। করোনাকালীন সময়ে তিনি সিএমপির পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন। এছাড়াও তিনি গণমুখী পুলিশিং কার্যক্রমে নেয়া বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মিত হয়েছে। এই টানেলের নিরাপত্তাসহ কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ের নিরাপত্তায় সিএমপি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে বে টার্মিনাল ও মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর চালু হলে চট্টগ্রাম শহর ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে হাজির হবে। অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা এবং শহরের আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিএমপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
পুলিশ লাইন্স মাঠে বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রাপন একাডেমির নৃত্যশিল্পীদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় সিএমপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন। কমিশনারের স্বাগত বক্তব্যের পর সিএমপির কর্মকাÐের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন আইজিপি। এরপর তিনি সিএমপির বিভিন্ন ইউনিটের স্টল ঘুরে চা চক্রে যোগ দেন। এর আগে তিনি নবনির্মিত সিএমপির কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগার, কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ও মনছুরাবাদ পুলিশ লাইন্সে পুলিশের ব্যারাক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর পরিদর্শন করেন।
সুধি সমাবেশে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিন আক্তার, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিন হাজার দুইশ’ ৩৮ জন পুলিশ সদস্য ও ছয়টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সের অধীনে এটি গঠন করা হয়। বর্তমানে সিএমপিতে চারটি পৃথক জোনে ১৬টি থানা ও প্রায় ৭ হাজার সদস্য কর্মরত রয়েছেন। চলতি বছর সিএমপি প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর উদযাপন করছে

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক