নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে, তা কবে নাগাদ শেষ হবে বলা কঠিন। তবে জলাবদ্ধতা প্রকল্পে খাল ও নালার রিটের্নিং ওয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে। কাজ শেষ হোক আর না হোক, আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে খাল ও নালার মাটি উত্তোলন করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় জলজট হলে তার দায় দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএকে নিতে হবে।
গতকাল সকালে নগরীর আন্দরকিল্লায় পুরাতন নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চসিকের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ২৩ম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
স্মার্ট বাংলাদেশের পথযাত্রায় চট্টগ্রামকে এগিয়ে রাখা নিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে স্মার্ট সিটি হিসেবে রূপান্তর করতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগরীকে একটি আধুনিক বন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রায় ২ হাজার ৫ শ কোটি টাকার প্রকল্প এবং বারইপাড়া খালসহ নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ ও সেবেকদের উন্নত বাসস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে যে প্রকল্পগুলো বরাদ্দ দিয়েছেন, তা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পগুলোর কাজ দৃশমান করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের কার্যক্রমগুলি প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে। এ কারণে চলমান প্রকল্পগুলো আন্তরিক এবং মনযোগী হয়ে দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। ২ হাজার ৫ শ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার টেন্ডার আহবানসহ কাজগুলো দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা এবং ১৫টি ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলীদের কঠোর নির্দেশনা এবং আগামীতে প্রতিটি সাধারণ সভার আগে প্রকল্প সমূহের কাজের অগ্রগতি সম্পর্ক প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নিদের্শনা প্রদান করেন এবং চট্টগ্রাম নগরীকে সুন্দর করে সাজাতে গেলে সকল সেবা সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে হবে।
মেয়র বলেন, চসিক শ্রমিক কর্মচারী লীগ (সিবিএ) কর্তৃক উপস্থাপিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি কার্যকর করার জন্য সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মেয়র আরো বলেন, নগরীতে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্শার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও জনসাধারণের ভোগান্তি হচ্ছে, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য খুব শীঘ্রই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে আলোচনা করে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্শা, গ্রাম সিএনজি চলাচল বন্ধ করার অভিযান শুরু করা হবে। তিনি নগরীতে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্শা উচ্ছেদ করে সোলার বিদ্যুৎ চালিত রিক্শা চালু করা বিষয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
একই সাথে ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা এবং উচ্ছেদকৃত স্থান যাতে পুনঃদখল হতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোরভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং সড়ক ও অলি-গলিতে অবৈধভাবে বসা কাঁচা বাজার উচ্ছেদ ও বে-পার্কিং ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মেয়র পিডিবি কর্তৃক বর্ধিতকৃত রাস্তাসমূহ থেকে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নালার উপর কোন পোল যাতে স্থাপন করা না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পিডিবি কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক নগরীর বিভিন্ন সড়ক কর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, অনুমতি ছাড়া ওয়াসা রাস্তা কর্তন করলে সংশ্লিষ্ট বাসা/বাড়ির মালিক, দায়িত্বরত ওয়াসার প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। অনুমিতপত্র থাকলেও সড়ক কর্তনের সময় ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে অবহিত করতে হবে।
মেয়র দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহাল্লায় ও রাস্তায় স্থাপিত পানির কলগুলো বিনা নোটিশে তুলে নেয়া হচ্ছে বিধায় বস্তিবাসী ও যাদের বাসগৃহে ওয়াসার পানির লাইন নেই সেসব জনসাধারণ পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণের পূর্বে স্থাপনকৃত পানির যে কলগুলো ছিল, তা পুনরায় স্থাপন, যেগুলো নষ্ট, তা বন্ধ না করে সচল করার জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
মেয়র নগরীর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং ওয়ার্ডগুলো উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ার কারণে অপরিস্কার ও লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে হয় বিধায় মানবিক বিবেচনায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখিত ওয়ার্ড সমুহে পানির লাইন স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, চসিককে সঠিকভাবে পরিচালন করার জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এজন্য চসিকের খালি জায়গাগুলোতে আয় বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। নালার উপর স্ল্যাব নির্মাণকারীদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কাজ জোরদার করতে হবে। অন্যদিকে বিভিন্ন ফ্ল্যাট মালিকদের কাছে পাওনা, হাট-বাজার ও ঘাট ইজারা গ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১৫০ কোটি টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন।
সভার শুরুতে নগরীতে ইতোমধ্যে মৃত্যু বরণকরী বিশিষ্টজনদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে চসিকের ভাবমূর্তি বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোনাজাত পরিচালনা করেন চসিকের মাদ্রসা পরিদর্শক মওলানা মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ চৌধুরী।