প্রতি বছর স্কুলে ভর্তির সময় এলেই নগরীর বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফি নিয়ে বাণিজ্য শুরু করে। এতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্কুলে ভর্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনা। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েকগুণ বেশি ভর্তি ফি আদায় করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুলে ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা, সেন্ট জোসেফ’স টিউটোরিয়াল স্কুলে ৬ হাজার ২০০ টাকা, অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (১-৫ম শ্রেণির জন্য) ভর্তি ফি ৫ হাজার ৮৫০ টাকা এবং খাতা ও ডায়রিতে ৯৩০ টাকা। (ষষ্ঠ-৯ম শ্রেণিতে) ভর্তি ফি ৫ হাজার ৮০০ টাকা এবং খাতা ও ডায়রিতে ১ হাজার ২০ টাকা। সেন্ট মেরিস স্কুলে ভর্তি ফি ৩ হাজার এবং নতুন ভবন নির্মাণে ১ হাজার টাকা। এ জি চার্জ স্কুলে ভর্তি ফি ৬ হাজার ৫০০ টাকা, ড্রেসে আরও ১ হাজার ২০০ টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা -২০২২ এর ১০.৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে- সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় পাঁচশ টাকা, পৌর-উপজেলা এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বেশির ভাগ স্কুল এ নীতিমালা মানেনি। বাড়তি ফি আদায় করেই ভর্তি করাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে প্রশাসনের দাপ্তরিক একটি কমিটি করা হলেও নজরদারি নেই ।
জানা গেছে, শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায় তদারকি করতে সম্প্রতি বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় তারা অতিরিক্ত ফি নেওয়ায় কারণ দর্শানোর নিদের্শ দেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটি) আবু রায়হান দোলন জানান, স্কুলে ভর্তি অনিয়ম বন্ধে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিতে তৎপর।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী জানান, আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ এখনো আসেনি এ বিষয়ে। এছাড়াও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয়, সেক্ষেত্রে আমরা অভিযোগ না পেলে কিছু করতে পারবো না।
এদিকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে ফি বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় মনিটরিং টিম গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ জন উপ-সচিবের নেতৃত্বে পৃথক ৪টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি, ভর্তি ফি, উন্নয়ন ফিসহ অন্যান্য ফি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে গ্রহণ করছে কিনা তা সরেজমিনে যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে এসব কমিটি। ঢাকা মহানগরীতে ১৬টি মনিটরিং কমিটি, ৮টি বিভাগীয় মনিটরিং কমিটি, ৫৫টি জেলা মনিটরিং কমিটি জেলা সদর এবং উপজেলা মনিটরিং কমিটিকে উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত বিষয়ে সরেজমিনে মনিটরিং করে মাউশি অধিদপ্তরে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রশাসনের কঠোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে বলা হয়, বৈশ্বিক করোনা মহামারি-উত্তর অর্থনৈতিক মন্দায় সাধারণ মানুষ যখন জীবন-জীবিকা নিয়ে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন তখন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নামিদামি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালা উপেক্ষা করে ভর্তি ও পুনঃভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভ‚তভাবে অতিরিক্ত হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে