নব্বইয়ের দশকে দেশে বেসরকারিখাতে প্রথমদিকে উৎপাদনে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড সিমেন্ট। গুণগতমানসম্পন্ন এই সিমেন্টের টেস্ট রেজাল্টে গুণাগুণ, মানে সবসময় একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখা হয়।
ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ হাকিম আলী বলেন, আমরা চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের গ্রামাঞ্চলে সিমেন্ট সরবরাহ করে দেশের নির্মাণশিল্পে অবদান রেখে যাচ্ছি। দেশের ন্ডিÐি পেরিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত ত্রিপুরায় সিমেন্ট বিপণন করছি। বাজারে আমাদের ৩টি ব্র্যান্ড ডায়মন্ড এক্সট্রিম, ডায়মন্ড কোস্টাল প্লাস, অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট রয়েছে।
বিশ্বের সেরা সব জায়গা থেকে ক্লিংকারসহ অন্যান্য কাঁচামাল কিনে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। উপক‚লীয় অঞ্চলের চাহিদা চিন্তা করে দেশে প্রথম এবং একমাত্র লবণাক্ততা এবং ফাটল প্রতিরোধী সিমেন্ট ডায়মন্ড কোস্টাল প্লাস বাজারে আনা হয়।
হাকিম আলী বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা থেকে সাতক্ষীরার রায়মঙ্গল কালিন্দী নদী পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে জোয়ার ভাটার প্রভাব, নোনা পানির অনুপ্রবেশ এবং ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব বলয়যুক্ত এই অঞ্চলের পুরোটাই ক্ষয়প্রবণ। তার ওপর রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি। ডায়মন্ট কোস্টাল প্লাস বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি পোর্টল্যান্ড স্ল্যাগ সিমেন্ট যাতে পানি মেশালে ট্রাইক্যালসিয়াম সিলিকেট ও ড্রাইক্যালসিয়াম সিলিকেট গঠিত হয়। তাছাড়া এই সিমেন্টের হাইড্রেশনের হার সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ধীরগতি সম্পন্ন, যা তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ফাটল দেখা দেওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে কংক্রিটকে ভেদ্যতা প্রতিরোধী করে তোলে। তাই বাজারে প্রচলিত যে কোনও সিমেন্টের চেয়ে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ঠেকানো ও ক্ষয়রোধে অনেক বেশি কার্যকর ডায়মন্ড কোস্টাল প্লাস যা ব্যবহারে স্থাপনা হবে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী। রুক্ষ জলবায়ু, লবণাক্ততা ও আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করে স্থাপনাকে। তিনি জানান, দেশের ছোট-বড় বেশ কিছু প্রকল্পেই ডায়মন্ড সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো যেসব বড় প্রকল্পের কাজ করছে, তারাই ডায়মন্ড সিমেন্টকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, ৩৬ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্ট, ১১ হাজার কোটি টাকার সিডিএর ওয়াটার লগিং প্রকল্প, ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে এক্সটেনশন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর রানওয়ে এক্সটেনশন, সিডিএর চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্প, বাংলাদেশের প্রথম হাইটেক শেখ জামাল ইনকিউভেটর প্রকল্প, কক্সবাজারের খুরুসকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, হালিশহরের মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
হাকিম আলীর মতে, বাংলাদেশে সিমেন্ট শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও সিমেন্টের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে মাথাপিছু সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি। বর্তমানে বাংলাদেশে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার প্রায় ১৮০ কেজি। চাহিদা পূরণে সিমেন্টের যোগান বৃদ্ধি করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত অঞ্চলগুলো এবং মিয়ানমারে সিমেন্ট রপ্তানি হয়। ২০১৯-২০২০ সালে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮.৩ বিলিয়ন ডলারের সিমেন্ট। সব জায়গায় বাংলাদেশের সিমেন্টের চাহিদা থাকায় রপ্তানিতে সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতে সিমেন্ট রপ্তানির সম্ভাবনা ধরতে ভারতীয় লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা করা উচিত।
দেশে সিমেন্টের মোট চাহিদার চেয়ে মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ। তাই প্রতিনিয়ত বাজার ধরার জন্য কোম্পানিগুলো দাম নির্ধারণ নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। মুনাফা করতে না পেরে এবং ব্যাংক লোনের সুদের উচ্চহারের কারণে অনেক কোম্পানি বাজার থেকে ঝরে যাচ্ছে। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ কর, ব্যাংক লোন সহজলভ্য না হওয়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি এই শিল্প বিকাশে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
করোনার কারণে সিমেন্ট ব্যবসায় মন্দাভাব কেটে গেছে। তবে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের আমদানি খরচ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ফলে নির্মাণশিল্পের সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি করোনা পরবর্তী বৈদেশিক রেমিটেন্স এ কিছুটা মন্দাভাব থাকায় গ্রামাঞ্চলে নির্মাণকাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তারপরও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের কাজ পুরোদমে শুরু হওয়ায় এই শিল্পের মন্দাভাব দ্রæতই কেটে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।