গত মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চসিকের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা সভায় উঠে আসে চার বছরে সেবক নিবাস প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২১ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৭ শতাংশ। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার সেবক কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, ফাইলিংয়ের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। ভবন নির্মাণযজ্ঞের কোনো চিহ্নই নেই। গত এক বছর ধরে কোনো কাজ করছেন না ঠিকাদার। এমনকি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় আর কাজ না করার ঘোষণাও দিয়েছেন। তাই ওই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে পুনঃদরপত্র আহŸান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক।
নগরীর পাথরঘাটা এলাকার বান্ডেল কলোনিতে তিনটি ১৪ তলা ভবন নির্মাণের কথা। কাজ চলছে দুইটির। সেবকরা আরেকটি ভবনের জন্য জায়গা ছেড়ে না দেওয়ায় সেটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। অন্যদিকে প্রকল্পের ডিপিপিতে না থাকলেও মাদারবাড়ি সেবক কলোনিতে একটি ভবন নির্মাণের দাবি ছিলো সেবকদের। ফলে ২০২০ সালে সেখানে ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন মেয়র। তবে সাগরিকায় একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। অন্যদিকে জামালখানের ঝাউতলাতেও একটি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। অর্থাৎ ৭টি ভবনের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে পাঁচটির। সেবকরা জায়গা খালি করে না দেওয়ায় আরও দুইটি ভবনের কাজ শুরুই হয়নি।
মাদারবাড়িতে ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুনিরুল হুদা বলেন, মাদারবাড়িতে সেবকরা জায়গা দিলে প্রকল্পটি সংশোধন করে ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই। তবে তাদের জায়গা খালি করতে হবে। ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করতে হবে। এগুলো তাদের জন্যই করা হচ্ছে। ফিরিঙ্গিবাজার সেবক কলোনিতে ঠিকাদার কাজ ফেলে রাখায় তাকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে জানান এ প্রকৌশলী।
সরেজমিনে গিয়ে সেবকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি বিষ্ণু দাশ জানান, ‘এখন যে ভবনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে রুমগুলো খুবই ছোট। একটি পরিবার বাস করার মতো না। আমাদের বিশ্বাস ডিপিপিতে এ ধরনের ছোট ঘর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিবেন না। আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রীর সাথে দেখা করেছি। ওনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সিটি করপোরেশন কি করছে সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানাচ্ছে না। মেয়র মহোদয় পরিদর্শনে এসেছিলেন, ওনি নিজেই স্বীকার করেছেন রুমগুলো ছোট। তাই তিনটি ফ্ল্যাটকে দুইটি করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে ফ্ল্যাটের সংখ্যা কমে যাবে। আমরা চাচ্ছি সেবকদের প্রতিটি পরিবার যেন একটি করে ফ্ল্যাট পায়।’ বিষয়গুলো নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মুনিরুল হুদা জানান, ‘ডিপিপি অনুসারেই ভবনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। কমন স্পেসসহ ৬শ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু তারা সেটা মানছে না। আপাতত ভবনের স্ট্যাকচারের কাজ শেষ হবে। একইসাথে ফ্ল্যাটের আকার বাড়ানোর জন্য ডিজাইন চেঞ্জ করার কাজও চলছে।
প্রকল্পটি নিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সেবকদের মান উন্নয়ন ও উন্নত আবাসন গড়তে প্রধানমন্ত্রী যে প্রকল্প দিয়েছে তা শতভাগ বাস্তবমুখী করতে আমরা কাজ করছি। সেবকদের দাবি অনুযায়ী কাজগুলো হচ্ছে। তারা জায়গা খালি করে দিলে মাদারবাড়িতেও ভবন হবে। ফ্ল্যাটের আকার বাড়ানোর কাজ চলছে।’
চসিক সূত্র জানিয়েছে, নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হরিজন স¤প্রদায়ের ৩ হাজার ৬৪৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করেন। বান্ডেল কলোনি, ঝাউতলা, মাদারবাড়ি ও সাগরিকার হরিজন কলোনিতে তাদের বসবাস। সময়ের সাথে বেড়েছে পরিবারে সদস্যের সংখ্যা। ফলে এক রুমের জরাজীর্ণ ঘরে থাকেন ৭-৮ জন। তাদের এমন দৈন্যদশা থেকে মুক্তি দিতে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের আমলে প্রকল্পটি গৃহীত হয়। সরকার ৭টি ভবন নির্মাণে প্রায় ২৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পের বিপরীতে পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে অস্থায়ী ঘরে সেবকদের স্থানান্তর করতে হবে। তারপর পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু করতে হবে। তবে অস্থায়ী ঘর তৈরি করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় সিটি করপোরেশনকে। কেননা নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য কোনো এলাকায় করা অস্থায়ী ঘরে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন সেবকরা। তাই পুরাতন ভবনের পাশেই রাস্তার একপাশে তৈরি করা হয়েছে এসব অস্থায়ী ঘর। সেখানে বিদ্যুৎ-গ্যাসের লাইন দিতেই সময় গেছে দুইবছর। এখন খালি হওয়া জায়গাতে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই নগরীর পরিচ্ছন্নকর্মীদের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে চসিকের গৃহীত ২৩১ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’ শীর্ষক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পে সরকারি তহবিল (জিওবি ফান্ড) থেকে ১৮৫ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। বাকি ৪৬ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। করোনার কারণে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়েছে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ১৪তলা বিশিষ্ট ৭টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার ৩০৯টি ফ্ল্যাট থাকবে। এর মধ্যে ৩৩ নং ওয়ার্ডস্থ বান্ডেল কলোনিতে ৩টি, ফিরিউঙ্গবাজারে ১টি, ঝাউতলায় ২টি এবং সাগরিকায় চসিকের নিজস্ব জায়গায় ১টি ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে।
ভবনগুলোতে বসবাসকারী পরিচ্ছন্নকর্মীদের প্রতিটি পরিবারের জন্য দুইটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, দুইটি বাথরুম থাকবে। প্রতিটি ভবনে দুইটি লিফট থাকবে। এছাড়া তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের জন্য প্রতিটি ভবনের নিচতলায় স্কুল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজেনের ব্যবস্থা রাখা হবে।