সরেজমিনে দেখা যায়, বাবা মোহছেন আউলিয়াসহ কয়েকটি আড়তের সামনে সড়কের উপর স্ত‚প করে রাখা হয়েছে কয়েক মণ ফাইস্যা, বেলে ও পোপা মাছ। শ্রমিকেরা মাছগুলোকে ঝুড়িতে ভরে একটি ড্রামের মধ্যে দুইবার করে চুবিয়ে নিচ্ছেন। বুঝতে বাকি রইলো না, সেটা রঙ-এর ড্রাম। চুবানোর পর মাছগুলোকে আলাদা একটা ড্রামে রাখছেন। আগে মাছগুলো সাদা বর্ণের থাকলেও ড্রামে চুবানোর পর হয়ে যাচ্ছে লালচে ও কমলা রঙ-এর।
রফিক আলী নামে এক শ্রমিক জানালেন, এগুলো বেগুনিতে ব্যবহারের রং। তাই এ রঙে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে না। মাছকে আকর্ষণীয় করে তুলতে রঙয়ের বালতিতে চুবানো হয়েছে।
আরেকজন জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বললেন, এসব মাছ দীর্ঘক্ষণ তাজা থাকার জন্য রঙয়ের বালতিতে চুবানো হয়েছে। আবার কিছু মাছ আসে বার্মা (মিয়ানমার) থেকে। এসব মাছ সেখান থেকেই ফরমালিন দিয়ে আনে। কারণ মাছ পরিমাণে বেশি হওয়ায় বরফ দিয়ে আনা যায় না। প্যাকেটে ঢুকানোর আগে কেমিক্যাল মেশানো হয়।
রং দিয়ে সামুদ্রিক মাছ তাজা করার এমনই চিত্র নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারেও দেখা গেছে। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের ফুলকা বেশি লাল দেখানোর জন্যও রঙয়ের ব্যবহার করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু মাছ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে সতর্ক করে দিয়েছি।
রঙ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, রঙ দিলে মাছ সুন্দর ও তাজা দেখায়। ক্রেতারাও বেশি কেনেন। অল্প পরিমাণে রঙ দেই। আমরা নিজেরাও এ মাছ খাই। এতে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, বড় বড় রুই মাছ, কার্প জাতীয় মাছের কানের দিকে রঙ লাগিয়ে দিলে কাস্টমাররা আকৃষ্ট হয়। এর সাথে ফরমালিন তো আছেই। সব মিলিয়ে মাছ তরতাজা দেখায়।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ক্রেতা মাহমুদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, রঙ শুধু মাছে নয়, সবজি এবং ফলেও দেওয়া হয়। এছাড়া শুধু রঙ-ই নয়, রঙিন ও উজ্জ্বল বাতির মাধ্যমেও আকৃষ্ট করা হয় ক্রেতাদের। নজরদারি না থাকার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী পূর্বদেশকে জানান, কৃত্রিম রঙ মেশানো যে কোনো খাবারই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া মাছে কোন কেমিক্যালটা ব্যবহার করছে তা না জানাতে বিশেষভাবে বলতে পারছি না রঙ মেশানো মাছ স্বাস্থ্যের কেমন ক্ষতি করবে। প্রতিটি রঙ আলাদা আলাদাভাবে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। কিছু কিডনির ক্ষতি করে আর কিছু লিভারের। তা পরীক্ষা করে বলা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিকর কেমিক্যাল গ্রহণে চামড়ায় নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। কৃত্রিম রঙ, ডালডা ও অতিরিক্ত তেল ব্যবহারে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হরমোন তার ভারসাম্যও হারাতে পারে। স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে মানুষের মধ্যে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগও প্রয়োজন।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক হিরন মিয়া বলেন, আমরা অভিযানে গেলে বিভিন্ন ধরনের রঙ পাই। যেগুলো খাওয়ার উপযোগী নয়। শুধুমাত্র ব্যবহার উপযোগী। এসব রঙ পাউডার আকারে কিনে নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছে ব্যবহার করে থাকে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, বাজার তদারকি আমাদের রুটিন কাজ। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকে। তদারকিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের মাছের বাজারগুলোতে যেখানে রং মিশ্রিত এবং ক্ষতিকারক জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ পেয়েছি, সেখানে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি। ভোক্তার স্বার্থে আমাদের তদারকিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও অসাধু ব্যবসায়ী ও রঙ মেশানোর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।