মাদকসহ গ্রেপ্তার ষাট বছর বয়সী শামসুল হক বাচ্চুকে আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় হাজতখানায়। একটু পর প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হবে কারাগারে। কিন্তু এর আগেই তিনি গায়েব। হাজতখানা থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে পালানোর মতোই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম আদালতে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৭ পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি। এছাড়া কোর্ট পুলিশের পক্ষ থেকে কোতোয়ালী থানায় দণ্ডবিধির ২২৪ ধারায় বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি বিকালে চট্টগ্রাম জেলা হাজতখানায় বাচ্চুর পলায়নের ঘটনাটি ঘটে। পরদিন ৬ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বাদী কোর্ট ইন্সপেক্টর জাকের হোসাইন মাহমুদ উল্লেখ করেন, চন্দনাইশ থানার একটি মাদক মামলায় (মামলা নং ৫) বাচ্চুকে আদালতে নিয়ে যান চন্দনাইশ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এরপর তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর উদ্দেশ্যে হাজতখানায় রাখা হয়। যেখানে অন্য আসামিরাও ছিলেন।
হাজতখানার সেরাস্তা টেবিলের পাশের একটি বেঞ্চে বাচ্চু বসা ছিলেন উল্লেখ করে এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কারাগারে পাঠাতে প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছিল আসামিদের। কিন্তু বেঞ্চে বাচ্চুকে পাওয়া যায়নি। কৌশলে তিনি পালিয়ে আত্মগোপন করেন।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লায় বাড়ি হলেও ঢাকায় বসবাস করেন বাচ্চু। ৪ জানুয়ারি চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া এলাকা থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ তাকে আটক করে পুলিশ। কঙবাজার থেকে সংগ্রহ করে ইয়াবাগুলো তিনি ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে চন্দনাইশ থানায় একটি মামলা হয়। পরদিন ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে উপস্থাপন করলে ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জেলা কোর্ট ইন্সপেক্টর জাকের হোসাইন মাহমুদ চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, ঘটনায় মামলা হয়েছে। সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, হাজতখানা থেকে পালানো আসামি বাচ্চুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর আবুল কালাম নামের এক রোহিঙ্গা যুবক চট্টগ্রাম আদালতের কক্ষ থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পালিয়ে যান। পরদিন টেকনাফের লেদা ক্যাম্প থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর ঘটনাটি একই বছরের ৪ অক্টোবরের। সেদিন ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালত থেকে রায় ঘোষণার পর মো. আবুল হাশেম মাঝি (৬০) নামের এক লোক পালিয়ে যান। তিনি নোয়াখালী জেলা সদর উপজেলার খলিফারহাটের বেদীপুর নামক এলাকার কালামিয়া মাঝির বাড়ির মৃত নছির মিয়ার সন্তান।