ইমরান নাজির।
সরকারিভাবে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ১০টি মেশিন এসেছে। মেশিনগুলো এমন সময়ে এসে পৌঁছেছে, যখন পিপিপি’র আওতায় হাসপাতালে স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছিল। গতকাল বুধবার চট্টলার কণ্ঠকে এসব মেশিন পৌঁছানোর কথা নিশ্চিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব মেশিন কিডনি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হবে। তখন অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের নির্বিঘ্নে কম খরচে ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
এরই মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গরিব রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দিতে ২৫ জনের একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে। হাসপাতালের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে তাদেরকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে আসা ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু হলে আরও শতাধিক গরিব রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, বর্তমানে হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে চারটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে। আরও তিনটি ডায়ালাইসিস মেশিন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রয়েছে। এখন করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এই তিনটি মেশিন গরিব ও মুমূর্ষু রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা হবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এছাড়া গতকাল ঢাকা থেকে আরও ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন এসেছে। এসব মেশিন চালুর হওয়ার পর মোট ১৭টি মেশিনের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে গরিব রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা হবে।
তাছাড়া এখানে সরকারিভাবে কম খরচে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারবেন কিডনি রোগীরা। একজন রোগীকে ছয় মাসের জন্য একবারে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে দুই সেশনে ৪১৬ টাকায় এ ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হবে
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান ফোনালাপে চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, আজ (বুধবার) নতুন ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন এসেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব মেশিন ওয়ার্ডে স্থাপন করা হবে। আগের ৭টি সহ মোট ১৭টি মেশিনের মাধ্যমে বেসরকারির চেয়ে কম খরচে গরিব রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা যাবে।
ইতিমধ্যে আমরা ২৫ জন গরিব রোগীর একটি তালিকা করেছি। হাসপাতালের বতমান সক্ষমতা দিয়ে তাদের সেবা প্রদান শুরু হচ্ছে। নতুন ১০টি মেশিন চালু হলে আরও ১০০ গরিব রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হবে।
হাসপাতালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তাদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ফি দিয়ে রোগীদের সেবা নিতে হবে। আর সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ডায়ালাইসিস সেবা চালু হলে গরিব রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
- এদিকে গত রোববার (৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। একপর্যায়ে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। একই দাবিতে মঙ্গলবার হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে সংঘর্ষে জড়ান তারা। এঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করে। পরে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, আগে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে বেসরকারিভাবে ডায়ালাইসিস ফি প্রতি সেশনে ছিল ২ হাজার ৭৯০ টাকা। আর গরিব ও অসহায় রোগীরা সরকারি ভর্তুকি সুবিধায় সেশন প্রতি ৫১০ টাকায় সেবা পান। মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র কিছু রোগী ফ্রি-তে ডায়ালাইসিসের সেবা পান। তবে পিপিপির আওতায় সরকার ও স্যান্ডরের করা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর নির্ধারিত ফি’র ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। ফি বৃদ্ধির পর সরকারিভাবে সেশন প্রতি ফি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৫ টাকা এবং বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৯৩০ টাকা। চলতি বছরের শুরু থেকে এটি কার্যকর হলে কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনরা ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন।