২০১৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭২ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার পাশাপাশি ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২০ কোটি টাকা।
পরে ২০১৮, ২০২০ ও ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটির ডিপিপি সংশোধন করে মেয়াদ ও ব্যয় দুটিই বাড়ানো হয়। নতুন করে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর পর প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৫৩ কোটি টাকায়। ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দিলেও বর্ধিত খরচের টাকা জোগানে সায় দেয়নি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে প্রকল্পের সবশেষ বর্ধিত ব্যয়ের এই অর্থ টোলের মাধ্যমে আদায় করবে সিডিএ।
সংশোধিত ডিপিপির নথি অনুযায়ী, বায়েজিদ লিংক রোড দিয়ে চলাচল করতে হলে মোটরসাইকেল ১০ টাকা, তিন চাকার গাড়ি ১৫ টাকা, প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাস ৫০ টাকা, পিকআপ ও মিনিবাসের ৮০ টাকা, বড় বাস ১০০ টাকা, চার চাকার ট্রাক ১২০ টাকা, ছয় চাকার ট্রাক ১৫০ টাকা এবং ট্রেইলর বা কাভার্ড ভ্যানের টোল ধার্য করা হয়েছে ২০০ টাকা।
সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৬টি পাহাড় কাটে সিডিএ। যার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানাও করে সিডিএকে। ফলে খাড়াভাবে কাটা পাহাড়ের কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। এনিয়ে চুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের মতামতও নিয়েছে সিডিএ। এখন ঝুঁকিমুক্তভাবে পাহাড় কাটা ও মাটি ভরাটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে লাগবে ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
তাছাড়া রেলওয়ের আপত্তির মুখে আটকে থাকা সেতু নির্মাণেও নকশাগত পরিবর্তন আনা হয়। ফলে সেতুর নির্মাণ খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণের শুরুতে কিছু এলাকায় নালা-নর্দমা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমে থাকছে। এখন নতুন করে নালা নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি নগরবাসীর যাতায়ত ব্যবস্থা সহজ ও আনন্দদায়ক করলেও রাতের বেলায় সড়কটির পুরোটাই থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা এবং তৈরি হয়েছে ছিনতাইয়ের ঝুঁকি। এ জন্য এলইডি বাতি স্থাপনে বাড়তি খরচ হবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এছাড়াও পাহাড়ের ঢাল স্থিতিশীল করতে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণে অতিরিক্ত লাগবে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ও সড়ক নির্মাণে বাড়তি খরচ হবে আরও ৫ কোটি টাকা।
প্রকল্পের শুরুতে পরামর্শক ব্যয় সাড়ে ৪ কোটি টাকা থাকলেও তা বেড়ে হয়েছে এখন সাড়ে ৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাড়তি খরচ প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। তবে ভূমি অধিগ্রহণসহ কয়েকটি খাতে আগের হিসাবের তুলনায় ব্যয় কমেছে।
এ প্রসঙ্গে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, ‘কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মাণ কাজ শেষ করতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। আমরা মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত ডিপিপি পাঠালে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই অনুমোদন দিয়েছে কিন্তু ব্যয়টা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে করতে বলা হয়েছে। তবে সিডিএর ফান্ডে এরকম খরচ করার কোন টাকা নেই, সে কারণে ডিপিপিতে টোল আদায়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সেটা অনুমোদনও দেয়। টোল আদায়ের জন্য জানুয়ারি মাসেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ সিডিএ করবে। তাছাড়া নির্মাণের খরচও ব্যয় করবে সিডিএ। ফলে টোল আদায়ের বিকল্প নেই। টোল আদায় করলেও একেবারে সর্বনিম্ন হারেই তা আদায় করা হবে। সেটি আবার শুধু মাত্র একমুখী প্রবেশপথেই আদায় করা হবে। যারা ফৌজদারহাট দিয়ে প্রবেশ করবে ও বের হবে তাদের থেকেই টোল আদায় করা হবে। যারা বায়েজিদ হয়ে লিংক রোডে ঘুরতে যাবেন কিন্তু ফৌজদার হাট দিয়ে বের হবে না তাদের থেকে কোন টোল আদায় করা হবে না।’