ফরম ফিলাপের নামে বাড়তি ফি আদায় করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত কুরাইশ বুড়িশ্চর ডিগ্রী কলেজ। এই বাড়তি টাকার কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি— অতিরিক্ত নয়, গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্তে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে। সেমিনার ফি, গেস্ট টিচারের বেতন মেটাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ফরম পূরণের জন্য বিষয়ের পার্থক্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য ফি ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত ধার্য্য করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রতি পত্রের জন্য ২৫০ টাকা, ইনকোর্স ফি ৩০০ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ৪৫০ টাকা। আর কোনো বিষয়ের ব্যবহারিক থাকলে তার সঙ্গে কেন্দ্র ফি বাবদ আরও ১৫০ টাকা যোগ হবে। অথচ চসিক পরিচালিত কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মো. সিটি করপোরেশন কলেজে ফরম পূরণের ফি বাবদ আদায় করা হচ্ছে ৪ হাজার ৫০ টাকা করে। যেখানে নেওয়া কথা ২ হাজার ৭৫০ টাকা। কলেজটিতে ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয় নিয়ে চার বিষয়ের অনার্স কোর্স চালু আছে। ব্যবহারিক বিষয় না থাকার পরেও বাড়তি ১ হাজার ৩০০ টাকা নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের থেকে।
জয়ন্ত কুমার নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, মেয়ে যখন বলেছে ফরম পূরণের জন্য ৪ হাজার ৫০ টাকা লাগবে। আমিসহ গেলাম। পরে দেখছি কলেজ কর্তৃপক্ষ রশিদ দিচ্ছে না। আমি যে ফরম পূরণের জন্য টাকাটা দিলাম তার প্রমাণ হলো রশিদ। কিন্তু তাও তারা দিচ্ছে না। পরে যাচাই করে দেখি কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই তারা মৌখিকভাবে ফরম পূরণের জন্য বলেছে। যেখানে অন্য বেসরকারি কলেজ নোটিশ দিয়েছে ২৭৫০ টাকার। কিন্তু তারা নিচ্ছে ৪০৫০ টাকা। এখানে কোনো ব্যবহারিক বিষয়ও নাই। তাহলে এতো বাড়তি টাকা কেন নিচ্ছে তার জবাব দিতে পারে নাই। ফরম পূরণ করতে হলে এই টাকা দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, থার্ড ইয়ারে ভর্তির সময় তারা ৭ হাজার টাকা নিয়েছে। তখন বলেছে আর কোনো টাকা দিতে হবে না। কিন্তু এখন বলছে ফরম পূরণের টাকা ছাড়াও বকেয়া বাবদ নাকি আরও ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এমনিতেই তারা বাড়তি টাকা নিচ্ছে আবার এখানেও জোচ্চুরি করছে। এগুলো কি দেখার কেউ নাই? আমরা কাকে জানালে সমাধান পাবো? কে দেখবে যে কলেজগুলো ইচ্ছেমতো ফি নিচ্ছে।’ এই বলে আক্ষেপের কথা জানালেন এই অভিভাবক
একই বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাঈমা (ছদ্মনাম) চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্যান্য সরকারি বেসরকারি কলেজে ফরম পূরণে সরকারের বেঁধে দেওয়া ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কলেজে নিচ্ছে ৪ হাজারের বেশি টাকা। এটার জন্য কোনো নোটিশও দেয়নি। নোটিশের কথা বলাতে ডিপার্টমেন্ট হেড খুব যা-তা কথা বলেছেন। আবার ফরম পূরণের রসিদও দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে বাড়তি টাকা নিচ্ছে আবার রসিদও দিচ্ছে না। যার কারণে এখনো ফরম পূরণ করতে পারিনি। ১৭ তারিখ লাস্ট ডেইট বলেছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায় শিক্ষার্থীরা এই বাড়তি ফির বিষয়ে খুবই ক্ষুব্দ হলেও তারা সরাসরি মুখ খুলতে রাজি নয়, পাছে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতে পারে কলেজ শিক্ষকরা এই আতঙ্ক তাদের মাঝে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আনোয়ার (ছদ্মনাম) এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার এক বন্ধু হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজে পড়ে। ওদের নোটিশ দিয়েছে ফরম পূরণের ফি ২ হাজার ৭৫০ টাকা। আমাদের কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখি কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। পরে এক বন্ধুর থেকে শুনলাম ডিপার্টমেন্টের ম্যাম বলছে ৪ হাজার ৫০ টাকা লাগবে। পরে দেখি সবাইকেই এতো টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করা লাগবে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু এতো ফি নিচ্ছে না। আমাদের কলেজই কেন বেশি ফি নিচ্ছে বুঝতে পারছিনা। আবার রিসিটও দিচ্ছে না। হাতে হাতে টাকা নিচ্ছে। এ কারণে এখনো ফরম পূরণ করিনাই। রিসিট না নিলে কি বাসায় বিশ্বাস করবে এতো টাকা কলেজ আসলেই নিচ্ছে। যেখানে অন্য কলেজ কম নিচ্ছে।’
যোগাযোগ করা হলে কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মো সিটি করপোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদিন প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। বারবার ফোন কেটে দিচ্ছিলেন।পরে চট্টলার কন্ঠ টিম সরাসরি তার অফিসে গেলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি নেওয়া হবে। বেশি নেওয়া হয়না আমাদের। এমনতো হবার কথা না। আর আমি কিছুদিন ছিলাম না। আমার বুকে ব্যথা।
পরবর্তীতে তিনি বলেন, ‘১ হাজার টাকা বাড়তি সেমিনার ফি বাবদ নেওয়া হচ্ছে। গতবার করোনায় সেমিনার ফি নেওয়া হয়নি। তাই এবার থেকে সেমিনার ফি নেওয়া হচ্ছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা মনে করছে তাদের কাছ থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে।’
এর সঙ্গে যুক্তি দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের এমপিওভুক্ত টিচার মাত্র ২ জন। বাকি সাতজন গেস্ট টিচার দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। যার কারণে গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্তে আমরা এই টাকাটা নিচ্ছি।’
নোটিশ না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, ‘নোটিশ অবশ্যই দেওয়া হয়েছে। আমি যখন ছিলাম না তখন নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
নোটিশ দেখানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজ কলেজ বন্ধ। তাই আমার কাছে নেই। কাল আমি দেখাতে পারবো।’
টাকা জমার রসিদ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এই অধ্যক্ষ বলেন, ‘আসলে এগুলো আমরাই সোনালী সেবার মাধ্যমে দিয়ে দেই। যদি বাচ্চারা চায় তাদেরকে দেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্য কলেজ কেমন করে তা আমরা জানি না। আমাদেরটা একত্রে সবার ফি কলেজ থেকে জমা দেওয়া হয় যার কারণে রসিদ দেওয়া হয়নি।’
একই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।