ডিসেম্বর ৩, ২০২৪ ৬:৩২ অপরাহ্ণ

ড্রইংরুম রাজনীতি এবং সিভি কালচার

আমাদের দেশে সাধারণত চাকরির আবেদনে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা তুলে ধরতেই ২-৩ পাতার জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) তৈরি করেন পদপ্রত্যাশীরা। একাডেমিক কাজেও সিভির ব্যবহার রয়েছে। এবার সিভির ব্যবহার বেড়েছে রাজনীতিতেও। আগে মাঠের কর্মীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব সৃষ্টি করা হতো। এখন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে সিভির গুরুত্ব বেড়েছে। কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোতে সিভির ব্যবহার বেড়েছে। একপ্রকার ‘সিভি ফাঁদে’ বন্দি রাজনীতি। এই সিভির সুফল যেমন আছে তার কুফলও আছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
তারা বলছেন, সিভির যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। আবার এই সিভির ফাঁদে অনেক ত্যাগী নেতাও রাজনীতি থেকে শূণ্য হাতে ফেরত যাচ্ছে। অনেকেই সিভিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নেতা বনে যাচ্ছেন। যেসব তথ্য যাচাই হয় না। অনেক সময় সিভি জমা নেয়া হলেও কেন্দ্র কিংবা জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের আস্থাভাজনরাই কমিটিতে আসছেন। অথচ সিভি জমা নিয়ে বড় ধরনের আইওয়াশ করা হচ্ছে। এক পদে সিভি জমা দিলেও মিলছে ভিন্ন পদ। এই সিভি রাজনীতির কারণেই মাঠের রাজনীতি ড্রয়িং রুমে চলে গেছে।
সিভি জমা নেয়ার প্রবণতা বাড়ার পর আলোচিত যে কমিটি হয়েছে সেটি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি। এ ইউনিটের সম্মেলনের আগে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অর্ধশত নেতার সিভি জমা পড়ে। এরপরেও কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন আওয়ামী লীগ নেতাকে আনা হয়েছে। কমিটিতে পদ দিতে সিভি নয়, প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যক্তির পছন্দকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সহ-সভাপতি পদে আসা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহব্বায়ক মো. ফারুক পদত্যাগ করেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী জানান , ‘সিভি জমা নেয়ার সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এটা প্রথমে যুবলীগ পরে ছাত্রলীগ শুরু করেছে। হাইব্রীড ও অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সিভি জমা নেয়াটা সঠিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এটা ভিন্ন উদ্দেশ্যে নিলে সমস্যা হচ্ছে। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ক্ষেত্রে সিভির প্রকৃত অর্থ গুরুত্ব পায়নি। সিভির সাথে জমা প্রক্রিয়ার মিল ছিল না। এটা একটি ট্রেন্ড চালু হয়েছে। ভালোভাবে ব্যবহার করলে ভালো, নয়তো উল্টোটাই হচ্ছে। আমি নিজে সভাপতি পদে সিভি জমা দিলেও দেয়া হয়েছে সহ-সভাপতির পদ’।

এই সিভি জমা নেয়া নিয়ে মহানগর ও উত্তর জেলা যুবলীগের চারজন নেতার সাথে কথা বলতে চাইলেও সেখানে কমিটি গঠন না হওয়ায় তারা মুখ খুলতে চায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, সিভিতে কেউ সঠিক তথ্য দেয় না। সিভি জমা নেয়া হয় মূলত অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে। কিন্তু সিভি জমা দেয়াদের মধ্যে এমন কেউ আগে শিবির করতো কিংবা আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিল সেটি উল্লেখ করে না। সবাই আওয়ামী লীগের জন্য সর্বস্ব উজাড় করেছে এমন তথ্যই দেয়। নেতাদের উচিত সিভিকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রকৃত অর্থে পদে আনা যায় তাদের আচার আচরণ, রাজনীতির ত্যাগ কিংবা পারিবারিক মতাদর্শ যাচাই করা।
বাংলাদেশ যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘হাইব্রীড ও অনুপ্রবেশকারী কেউ দলে প্রবেশ করছে কিনা সেগুলো যাচাই বাছাই করতেই সিভি সংগ্রহ করা হয়। সিভিতে যে তথ্য আছে সবগুলো যাচাই করা হয়’।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক