এ ঘটনায় একই রাতে চারটি মামলা করে পুলিশ। এসব মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, নগর যুবদলের সম্পাদক মো. শাহেদ ও ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন সহ শীর্ষ নেতারা।
ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন নগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী সহ ৩১ জন। উল্লেখ্য, চার মামলায় ১২১ জনকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে।
বিএনপি নেতাদের দাবি, নগরের কর্মসূচি হওয়ায় ১৬ জানুয়ারি উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন না। এ দিন দক্ষিণের নেতারা বোয়ালখালীতে সমাবেশ করে। কিন্তু জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়কসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকেও আসামি করা হয়।
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার দলের প্রতিষ্ঠাতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের মধ্যে দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীও আছেন। যারা সবাই এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। ফলে এজাহারভুক্ত না হলেও গ্রেপ্তার আতংক ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলের কর্মীদের মাঝেও। সে আশঙ্কা থেকেই ২৫ জানুয়ারি কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর বিএনপি’র এক নেতা দৈনিক আজাদীকে বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আহ্বায়ক–সদস্য সচিব এবং সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকগণ রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেকই জামিন নিতে না পারলে তারা কর্মসূচিতে অংশ নিবেন না। আবার আসামি না হয়েও গ্রেপ্তারের ভয় আছে অন্য নেতাকর্মীদের।
এ অবস্থায় ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এর অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জ হবে। অবশ্য কর্মসূচি পালনে সমস্য হবে না বলে জানান নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, কর্মসূচি অবশ্যই পালন করব। এটা আমাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। নগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মিলে কর্মসূচি পালন করবে। যাদের আসামি করা হয়নি তারা অংশ নিবে। এর মধ্যে জামিন হলে আমরাও অংশ নিব।
‘আপনারা অভিযোগ করে আসছেন এজাহারভুক্ত না হলেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমনটি হলে এজাহারে যাদের নাম নাই তারা তো কর্মসূচিতে অংশ নিবেন না?’ এমন প্রশ্নে শাহাদাত বলেন, মামলা–হামলা রাজনীতির অংশ। তাই গ্রেপ্তারকে ভয় পাই না। সবাই অংশ নিবে। জুলুম-নির্যাতন বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে আমরা সবাই আবার সমাবেশ করব।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ যখন দেখছে তাদের চেয়ে আমাদের কর্মসূচিতে জমায়েত বেশি হচ্ছে এবং সাধারণ লোকজনের অংশগ্রহণ বাড়ছে তখন তারা মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু এসবে কাজ হবে না। হামলা মামলার ভয় করিনা আমরা।
দ্রব্যমূল্য জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে জনগণ ত্রাহি অবস্থায় আছে। তাই গণতান্ত্রিক আন্দোলন এখন জনগণের হাতে চলে গেছে। আমরা না থাকলেও জনগণ কর্মসূচি সফল করবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানচট্টলার কণ্ঠকে বলেন, গ্রেপ্তারের আশঙ্কা এবং বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে। এরপরও আগামী কর্মসূচি আমরা পালন করব। কর্মসূচি কোথায় করা হবে জানতে চাইলে বলেন, আগামী রোববার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। এরপর চূড়ান্ত করব।
‘গ্রেপ্তার আশঙ্কায় নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই অবস্থায় কর্মসূচি বাস্তবায়ন কঠিন হবে কীনা’ জানতে চাইলে বলেন, কঠিনের মধ্যেই আছি। এসব আমাদের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে গেছে। মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি এসবকে এখন আমরা সহজভাবে নিয়েছি। তাই কর্মসূচি পালনে সমস্যা হবে না।
নগর বিএনপি’র দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলী চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, মামলার এজাহারে না থাকলেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ বাসায়–বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে। আজও বিবিরহাটের মনজুর আলম মনজু ও মাহবুবের রহমান শামীম ভাইয়ের ব্যক্তিগত পিএস মো. আজমের বাসায় তল্লাশি করেছে। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে আছেন।
নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে কীনা জানতে চাইলে বলেন, সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করব। তারা যেভাবে নির্দেশনা দিবেন সেভাবে কর্মসূচি সাজানো হবে। আশা করছি কর্মসূচির আগে মামলার আসামি হওয়া নেতাকর্মীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন। জামিন হয়ে গেলে কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া মামলা, হামলা ও গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। এসবে তারা ভীত নন।