পুলিশ জানিয়েছে, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়ন এলাকার হাসিব শেখ (২৭) এবং তার বাবা হেদাগেত শেখ (৫৫) দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় বসবাস করতেন। হাসিব শেখ নগরীর এম এস জাওয়াদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিগারেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করতেন। সিগারেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসেবে তার সাথে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এমনই এক সম্পর্কের জের ধরে নগরীর ইপিজেড এলাকার খুচরা একটি দোকানের মালিক মাসুদ রানাকে জানান যে, পাইকারি সিগারেট বিক্রিতে বড় ধরনের অফার আসছে। তিনি মাসুদ রানাকে একই সাথে বেশি করে সিগারেট কিনে রাখার পরামর্শ দেন, যাতে অনেক বড় লাভ হবে বলেও তিনি জানান। গত বছরের ৯ অক্টোবর মাসুদ রানাকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি পাইকারীতে সিগারেট কিনতে মোট ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা হাসিবের হাতে তুলে দেন। এসব টাকার মধ্যে হাসিব ২০ লাখ টাকা নগদ এবং ১০ লাখ টাকা ভুক্তভোগীর ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন। বাকি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা অন্য দুজনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে বাদীর ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু এ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় হাসিব। প্রতারিত হওয়ার ব্যাপারটি বুঝতে পারার পর গত ১৭ অক্টোবর ব্যবসায়ী মাসুদ রানা এম এস জাওয়াদ এন্টারপ্রাইজের সুপারভাইজার হাসিব শেখ এবং একই প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি রুবেল ও ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে নগরীর ইপিজেড থানায় একটি মামলা হয়। মামলা দায়েরের পর এটির তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, হাসিব টাকাগুলো তুলে গত ১০ অক্টোবর মা–বাবাকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী চলে যান। রাজশাহী গিয়েও তিনি গত তিন মাসে তিনবার বাসা বদল করেন। হাসিব আগে একটি মোবাইল কোম্পানিতেও চাকরি করেছেন। এতে করে পুলিশের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের বিষয়ে তার ভালো ধারণা ছিল। যার কারণে তিনি তার মোবাইল বন্ধ করে ফেলেন এবং আত্মীয়–স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কিন্তু হাসিবকে গ্রেফতার করতে ভিন্ন কৌশলে এগোতে থাকি। আত্মসাৎ করা টাকায় মোটরসাইকেল কিনবে এমন ধারণা থেকে পুলিশ গত ২০ জানুয়ারি অনলাইনে দেখতে পাই, রাজশাহী মহানগর পুলিশে হাসিব নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে একটি মামলা হয়েছে। সেটা ধরে আমরা রাজশাহী গিয়ে ‘কেইস স্লিপে’একটি মোবাইল নম্বর পাই। সেই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে হাসিবের সন্ধান মেলে। পরে গত ২২ জানুয়ারি রোববার বিকেলে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ছোট বনগ্রামের উত্তর পাড়ার একটি ভবন থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো টিম হাসিব, তার বাবা হেদায়েত শেখ এবং মা নুরজাহান বেগমকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, হাসিবের বাসা থেকে নগদ ৩৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। হেদায়েত শেখ তার ছেলেকে আত্মসাৎ করা টাকা হেফাজতে রাখা ও পালাতে সহায়তা করায় তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। নুরজাহান বেগমকে পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত হাসিব এবং তার বাবাকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মেহনাজ রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। হাসিব ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত পিতা–পুত্রকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।