ইমরান নাজির।
১০তলা একটি ভবন’ গলার কাঁটায় পরিণত হয়ে আটকে থাকা বাকলিয়া এক্সেস রোডের কাজের গতি এসেছে। অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করার কারণে দ্রুতই শেষ হচ্ছে সড়কটির কাজ। ইতোমধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামি এপ্রিলের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে মে মাসে সড়কটি উন্মুক্ত করার চিন্তা করছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- সিডিএ। সড়কটি গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে বাকলিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরের যাতায়াত ব্যবস্থা আরো গতিশীল হবে।
১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানের প্রস্তাবনা অনুসারে বাকলিয়া এক্সেস রোডের প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। রাস্তার প্রস্তাব থাকায় সেখানে কোনো ভবনের অনুমোদন না দেয়ার কথা। কিন্তু সিডিএ রাস্তার জায়গাতেই একটি ১০তলা ভবনের অনুমোদন দিয়ে দেয়। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন ২০২০ সালের জুন মাসে রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমী আবাসিক এলাকায় সিডিএ’র অনুমোদন নিয়ে গড়ে ওঠা ১০ তলা ভবনের কারণে নির্ধারিত সময়ে এটির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সড়কটির দুই দিকের কাজ প্রায় সম্পন্ন হলেও মাঝখানে ওই ১০ তলা ভবনে রাস্তাটি আটকে যায়। সিডিএ’র অনুমোদিত ভবনটি নিয়ে বেকায়দায় পড়ে কর্তৃপক্ষ। অনুমোদিত ভবনটি ভাঙতে হলে সিডিএকে ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১১ কোটি টাকা এবং ভবনটি সরাতে আরো অন্তত ৪ কোটি টাকা মিলে ১৫ কোটি টাকার চাপে পড়ে। বেকায়দায় পড়ে সিডিএ প্রকল্প ব্যয় ১৫ কোটি টাকা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চায়। অবশ্য ওই সময় মন্ত্রণালয় বাড়তি ব্যয় অনুমোদন না দিয়ে বিকল্প বের করার পরামর্শ দেয়। একই সাথে মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটির সুপারিশে গঠন করা হয় একটি টেকনিক্যাল কমিটি। টেকনিক্যাল কমিটি ভবনটি না ভেঙে সড়কের নকশা পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়। নানা প্রক্রিয়া এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষে একনেক-এর সভায় ভবনটি মাঝখানে রেখে রাস্তাটির অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনের নকশা অনুমোদন করা হয়। এতে প্রকল্প ব্যয়ও প্রায় ১২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়। একনেক বাড়তি ব্যয়ও অনুমোদন করে। ফলে অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে সড়কের বাধা কাটে। আগামি জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে সড়কের কাজ শুরু করে সিডিএ।
সিডিএ বলছে, প্রকল্প মেয়াদের আগেই কাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য সড়কটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, বাকলিয়া এক্সেস রোডের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করে দশ তলা ভবনের পাশে রাস্তা করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ ৮৫ শতাংশের মতো শেষ হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। মে মাস থেকে আশা করছি রাস্তাটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা চন্দনপুরা থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণের এ প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির আওতায় ৪১৭ দশমিক ৫০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া ড্রেন নির্মাণ, ৪টি বক্স কালভার্ট, ১০ ক্রস কালভার্ট, ২০০টি স্ট্রিট লাইটও স্থাপনের কাজ মিলে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। যানজট কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরীর যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যানে রাস্তাটি প্রস্তাব ছিল। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত ৬ লেনের সংযোগ সড়ক নির্মিত হলেও নগরীর বিস্তৃত এলাকার মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
এ রোড নির্মাণ করা হলে বহদ্দারহাট কর্ণফুলী সংযোগ সড়কের সুফল বাকলিয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের মানুষ পাবে। এই সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি নগরীর ভেতরের রিং রোড ও আউটার রিং রোডগুলো নির্মাণ করা হলে নগরীতে ফ্লাইওভারের প্রয়োজন পড়বে না। বিকল্প রোড নির্মাণ হলে স্বাভাবিকভাবেই নগরীর যানজট কমে যাবে।