নগরীর দেওয়ানহাটে নির্মাণাধীন ভবন থেকে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রটির বিরুদ্ধে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্নভাবে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চক্রের সদস্য নূরুল ইসলাম মিয়া ১৪৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে থানা পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে জিম্মি করার চেষ্টা করতেছেন। নূরুল ইসলাম মিয়া এলাকায় ভ্যান চালক হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি নানা অপকর্মের সাথে জড়িত।
সরোজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্মাণাধীন এই ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। বর্তমানে ৩য় তলার ছাদের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে ৪ তলার ছাদ ঢালাইয়ের অপেক্ষায়। ইম্পালস প্রোপার্টিজ লি: ডবলমুরিং থানাধীন লালখান বাজার মৌজার বিএস ৪৭ নং খতিয়ানের ২৭১২ নং দাগের ৮৮৭ শতাংশ নিষ্কণ্টক ভূমিতে ভবন নির্মাণের জন্য মৃত আবুল কাশেমের ওয়ারিশগণের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কোন দাবী নিয়ে কখনো কারো অভিযোগ ছিলো না। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় নূরুল ইসলাম মিয়া নির্মাণাধীন ভবনের ভূমিতে তার অংশ রয়েছে মর্মে ১০ লক্ষ টাকা দাবী করে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালে তিনি উল্টো মিথ্যা মামলা করে হয়রানির হুমকী দেন। যেই কথা সেই কাজ, ১৩/০৩/২০২৩ ইং তারিখে নূরুল ইসলাম মিয়া(৭৫) বাদী হয়ে এডিএম (মহানগর) এর আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডবলমুরিং থানাধীন লালখান বাজার মৌজার বিএস ৩০২ নং খতিয়ানের ২৭১০ নং দাগের জায়গার বিরোধের কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭১২ নং দাগে। এই দুইটি দাগের দূরত্ব আনুমানিক ২০০ মিটার। মামলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাকলিয়াকে দখল বিষয়ে প্রতিবেদন এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেয়া হয়। শান্তি শৃঙ্খলার জন্য নোটিশ প্রেরণের সময় ডবলমুরিং থানা পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে নূরুল ইসলাম মিয়া বলেন যে, ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭১০ দাগে।
ইম্পালস প্রোপার্টিজ লি: এর পক্ষে ২৮/০৩/২০২৩ ইং তারিখে নূরুল ইসলাম মিয়া গংকে আসামি করে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করা হয়, যার নং ৪৫৪/২৩। মামলাটি তদন্তের জন্য ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন আদালত।
উল্লেখ্য যে, নূরুল ইসলাম মিয়ার ২ ছেলে জাহাঙ্গীর (৪৮) এবং আলমগীর (৪৫) এলাকার টোকাই ও কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে সুপরিচিত। তাদের ভয়ে নিরীহ এলাকাবাসী মুখ খোলার সাহস পায় না। জুয়া, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করে না। বিভিন্ন অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে। নূরুল ইসলামের ভাতিজি শাহনাজ আক্তার এলাকায় সবার কাছে মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। সে এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে আপোষের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় মর্মেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শাহনাজের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য হলো জিয়াউল হক গং এর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ঠ আদালতের মামলা নং ৩২৬/২২ এবং চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলা নং ১৬৬১/১৯। এই ২টি মামলাই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপোষ করা হয়।এতদিন অবৈধভাবে দখলকৃত বস্তি থেকে ভাড়া পেলেও বস্তি উচ্ছেদের পর আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
নূরুল ইসলাম মিয়া ভবনের ভূমির মালিকদের ভালোভাবে জিম্মি করার জন্য তার ভাতিজি সেই শাহনাজ আক্তারকে দিয়ে গত ৩১/০৩/২০২৩ ইং তারিখে ডবলমুরিং থানায় মইন উদ্দীন গং এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করান।
নির্মাণাধীন ভবনের ভূমি মালিক ও পদ্মা অয়েল এর জিএম (অডিট) মো: শফিউল আজম বলেন, ইম্পালস প্রোপার্টিজ লি: এর সাথে আমরা চুক্তিবদ্ধ হই দীর্ঘদিন আগে। ২০১৮ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যদি এই নির্মাণাধীন ভবনের ভূমির উপর নূরুল ইসলাম মিয়ার কোন দাবী দাওয়া থাকতো তাহলে এতদিন কোথায় ছিলো? আসল ঘটনা হলো এই ব্যক্তি একটি চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য। সে দীর্ঘদিন যাবত আমাদের কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। চাঁদার টাকা না পেলে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার কথা বলেছিলো। হয়রানির অংশ হিসেবে তিনি ১৪৫ ধারায় মামলা করে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে আমাদেরকে জিম্মি করে তার দাবীকৃত চাঁদা আদায়ের অপচেষ্টায় লিপ্ত। আশা করি প্রশাসন বিষয়টি অবগত হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অপর ভূমি মালিক চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কার্যনিবাহী সদস্য, পোস্তার পাড় আছমা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সমাজ কল্যাণ এর সদস্য মোহাম্মদ হোসেন আরশাদ বলেন “দেওয়ানহাট এলাকার সংঘবদ্ধ চক্র মাহাবুব – শাহানাজ আক্তার গং দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ানহাট এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। মাদক ব্যবসা এবং চাঁদাবাজি তাদের মূল পেশা। এলাকাবাসী সহ বিভিন্ন মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ নানা প্রতারণার সাথে জড়িত। মূলত তাদের অবৈধ কাজের আস্থানা দেওয়ানহাট ওভার ব্রীজের নীচের বস্তি গত ৬/৯/২০২৩ ইং তারিখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কতৃর্ক উচ্ছেদ করলে চক্রটি আমাদের সমাজের মানুষের বিরুদ্ধে আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। বিভিন্ন অখ্যাত সংবাদ মাধ্যমে নানা ভাবে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করিয়ে থানায় বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগসহ আদালতে মামলা করার হুমকি দিয়ে আসতেছে। তাদের বিভিন্ন প্রকার হুমকির কারণে আমি ডবলমুরিং মডেল থানায় গত ১৬/০৩/২০২৩ এবং ১/৪/২০২৩ ইং তারিখে ২টি সাধারণ ডায়েরি করেছি