মিতু হত্যার বিচার শুরু
আজাদী অনলাইন | রবিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ১:২৬ অপরাহ্ণ
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর তার স্বামী বাবুল আক্তারসহ সাত আসামীর বিচার শুরু হয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর মধ্য দিয়ে।
আজ রোববার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিচ্ছেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।
বাবুল আক্তারের পক্ষে শুনানিতে আছেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে আছেন চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. আবদুর রশিদ।
এদিন আদালত বসার পর বাবুলের আইনজীবীরা জানান, তারা অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন করেছেন। সেই কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ ঈদের পরে শুরু করার জন্য সময় চান তারা। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে।
এ বিষয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে উভয় পক্ষ। শেষে আদালত সাক্ষ্য শুরুর আদেশ দিলে মোশাররফ হোসেন জবানবন্দি উপস্থাপন শুরু করেন।
গত ১৩ মার্চ এ আদালতই বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর সিদ্ধান্ত দেয়।
২০১৬ সালে মিতু খুন হওয়ার পর তার স্বামী, সেই সময়ের পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বাদি হয়ে এই মামলা করেছিলেন। নানা নাটকীয়তা শেষে পিবিআইয়ের তদন্তে এখন তিনিই এ মামলার আসামী।
মামলার বাকি আসামীরা হলেন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম।
কারাবন্দি বাবুলকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য রোববার আদালতে হাজির করা হয়। হাজির করা হয় মুছা ও কালু ছাড়া বাকি চারজনকেও। কালু পলাতক, মুছা রয়েছেন নিখোঁজ। আসামীদের মধ্যে ভোলা জামিনে থাকা অবস্থায় আদালতে হাজিরা দেন।
প্রসঙ্গ, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসপি বাবুল তার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে ছিলেন। বদলি হওয়ার পর তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
ব্যাপকভাবে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল চট্টগ্রামে ফিরে মামলা করেন। পরে দুই সন্তানকে নিয়ে উঠেন ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে।
প্রথমে বাবুলের পক্ষে বললেও ধীরে ধীরে জামাতা বাবুলকে নিয়ে সন্দেহের কথা বলতে শুরু করেন মিতুর বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন। এর কয়েক মাস পর ডিবি কার্যালয়ে ডেকে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
নানা নাটকীয়তার মধ্যে পুলিশের চাকরি ছাড়েন বাবুল। তারপর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আলাদা বাসায় উঠেন।
এদিকে, সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে না পারার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। তারপর মুছাকে ঘিরে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে তদন্তকারীরা।
২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের লোক মারফত তিন লাখ ‘টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।
পিবিআই বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। তবে আদালতের নির্দেশে সেই মামলার সমাপ্তি ঘটে এবং বাবুলের মামলাটিই পুনরুজ্জীবিত হয়।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলের সঙ্গে ছয়জনকে রাখা হয় আসামির তালিকায়। এরপর গত ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।
গত ৩১ জানুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক জেবুন নেছা।
তার আগে গত ৩০ নভেম্বর পলাতক দুই আসামী মুছা ও কালুর বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় দু’জনকে পলাতক দেখিয়ে চলবে বিচার।
ঘটনার কিছুদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার দাবি করেছিলেন, মিতু হত্যার সপ্তাহখানেক পর তার স্বামীকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে মুছার আর কোনো হদিস মেলেনি।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে মুছাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।