বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে নানা সময়। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন ঊপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। তবে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝড়ে প্রাণক্ষয় কমেছে।
‘মোখা’ আঘাত হানার আগে দেখে নেওয়া যাক অতীতের বড় ঝড়গুলোতে চট্টগ্রামের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য। এসব ঝড়ে চট্টগ্রামের পাশাপাশি আরও কয়েকটি জেলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর বিডিনিউজ’র
১৮৭৬ সালের ২৯ অক্টোবর তীব্র ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। ঝড়ের প্রভাবে ১২ মিটারের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় ঊপকূলীয় এলাকা। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও নোয়াখালীর উপকূলে তান্ডব চালিয়ে যাওয়া ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
১৮৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুতুবদিয়া দ্বীপ। ঝড়ে প্রাণ যায় পৌনে দুই লাখ মানুষের। ১৯৪৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে ১২০০ অধিবাসী।
১৯৬০ সালে অক্টোবরে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে চট্টগ্রামে। এর প্রভাবে ৪.৫ থেকে ৬.১ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। চট্টগ্রাম ছাড়া এটি নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী ও পূর্ব মেঘনা মোহনায়ও আঘাত হানে। এতে মারা যান ঊপকূলের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা।
১৯৬৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় চট্টগ্রাম। সাথে নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং স›দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চলও বিধ্বস্ত হয়। সেই ঝড়ে প্রাণ হারান ১১ হাজার ৫২০ জন। ১৯৬৬ সালের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে চট্টগ্রামে।
১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী ‘গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’। ওই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২২ কিলোমিটার। যা আঘাত হানে চট্টগ্রামে। এ সাথে আঘাত হানে বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলায়। এতে প্রাণ হারায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ।
১৯৮৩ সালে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রাণ যায় অনেকের। ১৯৮৫ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয় সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও উড়িরচর এলাকা; সেই ঝড়ে প্রাণ হারান ঊপকূলের ১১ হাজার ৬৯ জন বাসিন্দা।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বয়ে যায় আরেকটি প্রলয়ঙ্করী ঝড়। ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সেই ঝড় ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে আঘাত হানে চট্টগ্রাম ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকায়। প্রায় দেড় লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে ওই ঝড়ে।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে সীতাকুন্ড ও এর আশপাশের এলাকায় আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময় ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়।
২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানুর’ আঘাতে লাখখানেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চট্টগ্রামে মৃত্যু হয় ২৪ জনের। ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’।