সূত্রে জানা যায়, নগরীর চন্দনপুরা থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ১ দশমিক ৬শ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকলিয়া এক্সেস রোড। আন্দরকিল্লার নবাব সিরাজুদ্দৌলা রোড থেকে বাকলিয়া থানা পর্যন্ত (বহদ্দারহাট শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক) সড়কটি ৬০ ফুট প্রস্থ করে নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তাটি সিরাজুদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা মসজিদের বিপরীত পাশে আয়েশা খাতুন লেইন (প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের বাড়ির পাশ দিয়ে) দিয়ে আড়াআড়িভাবে গিয়ে চাক্তাই খাল পার হয়ে ডিসি রোড থেকে উত্তর–পশ্চিম কোণে বেঁকে বগার বিল, সৈয়দ শাহ রোড অতিক্রম করে বাকলিয়া থানার পাশে গিয়ে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কে যুক্ত হয়েছে।
প্রায় ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। বাকলিয়া থানার কাছ থেকে শুরু হওয়া সড়কটির কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমী আবাসিক এলাকায় সিডিএর অনুমোদন নিয়ে গড়ে ওঠা ১০ তলা একটি ভবন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। একটি বেসরকারি কোম্পানি বাব–ই–ইউসুফ নামের ভবনটি নির্মাণ করে। ভবনটিতে ৩৭টি বিভিন্ন সাইজের ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করে ওই কোম্পানি। একই সাথে আরো পাঁচটি ভবনের অনুমোদন নিয়ে ফ্ল্যাট নির্মাণ ও বিক্রি করা হয়। ওই ভবনগুলো রাস্তার অ্যালাইনমেন্টের বাইরে থাকায় সমস্যা হয়নি। তবে ১০ তলা ভবনটি রাস্তার মাঝখানে পড়ায় প্রায় সাড়ে তিনশ ফুটের মতো জায়গায় রাস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) অ্যালাইনমেন্টের উপর গড়ে ওঠা ১০ তলা ভবনটি ভেঙে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতে সংকট তৈরি হয়। ভবনটি ভাঙতে সিডিএকে ১১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আবার ভবন ভাঙার জন্য খরচ করতে হবে অন্তত চার কোটি টাকা। প্রকল্পের ব্যয় ১৫ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি অনুমোদন করে অর্থের সংস্থান করার জন্য সিডিএ মন্ত্রণালয়ে যায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় এতে অনুমোদন না দিয়ে পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশে গঠন করা হয় একটি টেকনিক্যাল কমিটি। টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভবনটি না ভেঙে রাস্তার নকশা পাল্টানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এতে ভবনটি রক্ষা পাওয়া ছাড়াও সিডিএর খরচ সাশ্রয় হবে বলে কমিটি রিপোর্টে উল্লেখ করে।
টেকনিক্যাল কমিটির নতুন অ্যালাইনমেন্টের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এই প্রস্তাবটির ব্যয় অনুমোদনসহ প্রকল্পটি নতুন করে একনেকের অনুমোদন করাতে হয়। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর দ্রুত রাস্তাটির একশ মিটার জায়গার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
ইতোমধ্যে রাস্তাটির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সেতুসহ যাবতীয় কাজ হয়ে গেছে। পিচ ঢালাইয়ের কিছু কাজ বাকি আছে। তা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। অবশ্য রাস্তার কাজ বাকি থাকলেও যান চলাচল শুরু হয়েছে। প্রতিদিন অনেক গাড়ি এই রাস্তা ধরে চন্দনপুরা থেকে বাকলিয়া কিংবা শাহ আমানত সেতুর পাশ থেকে চন্দনপুরা হয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি নির্মাণে বেশ প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। এখন শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আগামী জুনের মধ্যে সড়কটি যান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এটি নগরীর বিস্তৃত এলাকার যান চলাচলে গতি আনবে বলে জানান তিনি।