চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। চলতি বছরেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা পর্যদ জরুরি সভা করে মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর পরামর্শে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার শর্তাবলী পূরণ করার মতো অবকাঠামোগতসহ সার্বিক সুযোগ–সুবিধা প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ছোট্ট একটি রুমে আউটডোর চিকিৎসা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রাথমিক কার্যক্রম। শুরুতে ২/৩ জন মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল পরবর্তীতে তা উন্নীত হয় ১০ বেডের ছোট্ট একটি হাসপাতালে।
মাত্র জনাদশেক মহিলা ও শিশুর চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে শুরু হওয়া হাসপাতালটিতে বর্তমানে প্রতিদিন আউটডোর চিকিৎসা নেন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী। হাসপাতালে ভর্তি থাকেন আট শতাধিক। ৮৫০ বেডের এই হাসপাতালের সাথে অচিরে যুক্ত হচ্ছে ১৫০ বেডের ক্যান্সার হাসপাতাল। কয়েকজন লাইফ মেম্বার দিয়ে শুরু হওয়া আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে বর্তমানে লাইফ মেম্বারের সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি। ডোনার মেম্বার রয়েছেন ৪শ জন। এই ১০ হাজার ৪শ জন মানুষের অনুদানের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দান–অনুদানে চলে হাসপাতালটি। জনগণের টাকায় পরিচালিত এই হাসপাতাল দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি একটি হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে বহুদিন ধরে। শুধু চট্টগ্রামের নয়, দেশের অনেক মানুষের আস্থা ও ভরসার স্থান হয়ে উঠেছে এই হাসপাতাল।
গতকাল সকালে মা ও শিশু হাসপাতালের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল হাসপাতালটির কার্যক্রম আরো গণমুখী করতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের যদি ২০ হাজার বর্গফুটের মতো অবকাঠামো থাকে এবং ৫ কোটি টাকার এফডিআর থাকে তাহলে অনায়াসে একটি মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনুমোদন পেতে পারে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল এর এই পরামর্শ নিয়ে গতকাল বৈঠক করে হাসপাতাল পরিচালনা পর্যদ। পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে মা ও শিশু হাসপাতাল ট্রাস্টের আওতায় একটি মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান।
দেশে কেবলমাত্র ঢাকায় এই ধরনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে বারডেমের অর্থায়নে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দেশে–বিদেশে হেলথ সায়েন্সের ডিগ্রিগুলোর চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেসিক সায়েন্স, পাবলিক হেলথ, অ্যালাইড হেলথ সায়েন্স; হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে বায়োকেমিস্ট্রি ও সেল জীববিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি, কমিউনিটি পুষ্টি, স্বাস্থ্য প্রচার ও স্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, পরিবেশগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড বায়োস্ট্যাটিক্স, রেডিওলজি ও ইমেজিং টেকনোলজি, ল্যাবরেটরি প্রযুক্তি, জৈব চিকিৎসা প্রকৌশল, মাইক্রোবায়োলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, কমিউনিটি পুষ্টি, ফলিত ল্যাবরেটরি বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অনার্স ও মার্স্টাস ডিগ্রি দেয়া হবে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শুরুতে কম বিষয় নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও ক্রমে বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, মাননীয় উপমন্ত্রী আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। উনি দারুণ একটি আইডিয়া দিয়েছেন। আমরা কেবল চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করব না, একই সাথে চট্টগ্রামের যুবসমাজের জন্যও সম্ভাবনার একটি দুয়ার খুলে দিতে পারব।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা আজ থেকেই কাজ শুরু করেছি। অচিরেই প্রোফাইল তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। চলতি বছরেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু করতে চাই। এটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় হবে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যেসব শর্ত রয়েছে সবগুলো ভালোভাবে পূরণ করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, মা ও শিশু হাসপাতাল অনেক ভালো একটি প্রতিষ্ঠান। এটি চট্টগ্রামের মানুষের আস্থা এবং ভরসার জায়গায় নিজেদের স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের আরো বিকাশ এবং প্রসার দরকার। তাই আমি তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছি। এই ব্যাপারে সহায়তা করবেন বলে জানান তিনি।