বোখারি শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ‘হোদায়বিয়া নামক স্থানে গিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উটনী কাসওয়া বসে পড়ল।’ কোরাইশের কাফেররা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওমরা আদায়ে বাধা হয়ে দাঁড়াল। তিনি তখন বললেন, ‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কোরাইশরা আল্লাহর সম্মানিত বিষয়গুলোর মধ্যে যে কোনো বিষয়ের সম্মান প্রদর্শনার্থে কিছু চাইলে আমি তা পূরণ করব।’ তিনি আরও বললেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে আসিনি। বরং আমরা এসেছি ওমরা করতে।’ তবুও কোরাইশরা তাঁকে হারাম শরিফে ঢুকতে বাধা দেয়। তখন তিনি তাদের সঙ্গে একটি সন্ধি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা থেকে শান্তি ও সালাম প্রতিষ্ঠায় তাঁর আগ্রহ ফুটে ওঠে। ‘আর যদি তারা সন্ধি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে তুমিও সে দিকেই আগ্রহী হও এবং আল্লাহর ওপর ভরসা কর। নিঃসন্দেহে তিনি শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত।’ [সূরা আনফাল : ৬১]
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুরভিত জীবন চাক্ষুস সাক্ষ্য, তিনি যুদ্ধ বা সংঘাতের প্রতি ডাকেননি। ঝগড়া বা বিবাদের দিকে আহ্বান জানাননি বরং তিনি ছিলেন দয়ার্দ্র, উদার ও ক্ষমাপ্রবণ। মক্কায় দাওয়াতের সূচনাসময়ে যখন তাঁর জাতি তাঁকে অসহ্য যাতনা দিচ্ছে, তাঁর কাছে পাহাড়ের ফেরেশতা এলেন। অনুমতি চাইলেন মক্কার দুই পাহাড়কে মিলিয়ে কোরাইশ কাফেরদের পিষে মারতে। তখন তিনি শান্তি ও সালামই বেছে নেন। বলে ওঠেন : ‘বরং আমি আশা করি আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন ব্যক্তিদের বের করবেন যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না।’ [বোখারি ও মুসলিম]
মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই ইসলামী ব্যবস্থা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনকে অপরিহার্য করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে যেসব বিষয় মানুষের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, হিংসা- বিদ্বেষ, জিগাংসা, হানাহানি, খুন খারাপী, হতাশা, বঞ্চনা, শোষণ, নিপীড়ন এবং সাধারণ ও স্বাভাবিক সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরায়, ইসলাম এ সকল বিষয়কে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে এবং হারাম ঘোষণা করেছে। তাই ইসলামের সাথে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদসহ যে কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের কোনই সম্পর্ক নেই।
ইদানিংকালে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের অপপ্রচার চালাচ্ছে। সে কারণে সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে ইসলামের সততা ও স্বচ্ছতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে কয়েকটি নির্দেশনা তুলে ধরা হল:
ইসলাম মানুষের কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়েছে, মানবতার কল্যাণের অন্যতম দিক হলো শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা। এ দায়িত্ব মুসলিম জাতির ওপর ন্যস্ত। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে আল্লাহ তাদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদের বাছাই করা হয়েছে মানবতার কল্যাণের জন্য।’ [সূরা আলে ইমরান: ১১০]
কুরআন সৎপথ প্রদর্শনকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ কুরআন হিদায়াত করে সেই পথের দিকে, যা সুদৃঢ় এবং সৎ কর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। আর যারা আখেরাতের উপর ঈমান রাখে না, আমরা তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি তৈরি করে রেখেছি।’ [সূরা বনী ইসরাঈল: ৯-১০]
ইসলাম মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, গরীব-মিসকীন তথা সকল মানবের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা ইবাদাত কর, আল্লাহর আর তার সাথে কাউকে শরীক করো না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সহচর পথিক এবং তোমাদের ডান হাত যাদের অধিকারী তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহঙ্কারী ও আত্মাভিমানীকে ভালবাসেন না।’ [সূরা নিসা: ৩৬]
ইসলাম অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করতে ও কারো সম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরে একজন আরেকজনের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে (যা উপার্জিত হয় তা ভক্ষণ করো)। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতি দয়াশীল। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন ও নির্যাতন করে এ রকম করবে আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করব। এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।’ [সূরা নিসা: ২৯-৩০]
ইসলাম লোকজনকে নিয়ে ঠাট্ট-বিদ্রুপ করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! কোন পুরুষ যেন অন্য পুরুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করে। সম্ভবতঃ ওরা বিদ্রুপকারীদের থেকে ভাল হতে পারে। আর কোন নারী যেন অন্য নারীকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করে। সম্ভবতঃ ওরা বিদ্রুপকারিণীদের থেকে ভাল হতে পারে। তোমরা একজন আরেকজনকে দোষারোপ করো না এবং একজন আরেকজনকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর অসৎ কাজ করা কতই না খারাপ। আর যারা তওবা করে না তারাই অত্যাচারী।’ [সূরা হুজুরাত: ১১