ইমরান নাজির, বৃহস্পতিবার , ১৫ জুন।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে নগরে ৯টি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট বসানোর অনুমতি পেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ অনুমতি দেয়। এতে প্রধান সড়ক থেকে ১০০ গজ দূরত্বে হাট বসানোসহ ১৪টি শর্তও দেয়া হয়। এর আগে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে গত ১১ মে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে চসিক। অনুমতি পাওয়ার পর বাজারগুলোতে ইজারাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে চসিক। বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাটগুলোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
অনুমতি পাওয়া হাটগুলোর মধ্যে চারটিই ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত। হাটগুলো হচ্ছে– খেঁজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ, পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, মুসলিমাবাদ টি কে গ্রুপের খালি মাঠ এবং মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ। বাকি হাটগুলো হচ্ছে– ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট ১ কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ। এদিকে অনুমতি পাওয়ার পর পশুর হাটগুলোতে ইজারাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। চসিকের এস্টেট শাখা থেকে আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত (ছুটির দিনসহ) দরপত্র ফরম সংগ্রহ করা যাবে। দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১৮ জুন। ওইদিনই দরপত্র বাঙ খোলা হবে।
জানা গেছে, অস্থায়ী হাটগুলোর বাইরে চসিকের ব্যবস্থাপনায় ৩টি স্থায়ী পশুর হাট আছে নগরে। এগুলো হচ্ছে– সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। সাগরিকা ও পোস্তারপাড়ে ইাজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিবিরহাটে দুইবার দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। বর্তমানে সেখানে খাস কালেকশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে চসিক। চাঁদ দেখা স্বাপেক্ষ আগামী ২০ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত স্থায়ী–অস্থায়ী সবগুলো হাটে প্রতিদিন পশু বিকিকিনি হবে।
প্রসঙ্গত, গতবার (২০২২) চসিকের ব্যবস্থাপনায় অস্থায়ী হাট বসেছিল ৩টি। এছাড়া ২০২২ ও ২০২১ সালে স্থায়ী–অস্থায়ী মিলে ছয়টি করে পশুর হাট বসেছিল চসিকের ব্যবস্থাপনায়। এর আগে ২০২০ সালে অস্থায়ী চারটিসহ মোট হাট বসেছিল সাতটি।
আছে ১৪ শর্ত : এবার অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য ১৪টি শর্ত দেয় জেলা প্রশাসন। শর্ত অনুযায়ী অস্থায়ী পশুর হাট–বাজার প্রধান সড়ক থেকে ন্যূনতম ১০০ গজ দূরে সুবিধাজনকস্থানে বসাতে হবে। যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধান সড়কের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। পশুর হাটের মাঠের চৌহদ্দির বাইরে এবং রাস্তায় কোনো পশু রাখা যাবে না বা খুঁটি স্থাপন করা যাবে না। সকল পশুর হাটে পশুর সুস্থতা যাচাই করার জন্য ভেটেরিনারি চিকিৎসক অথবা সার্জন এর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বাজার এলাকা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করতে হবে। রাস্তায় পশু পরিবহনের সময় ইজারাদার কিংবা তার মনোনীত প্রতিনিধি কর্তৃক কোনো পশু পরিবহনকারী গাড়ির পথ পরিবর্তন কিংবা নিজস্ব হাটে পশু নিতে বাধ্য করতে পারবে না। হাটে ক্রেতা–বিক্রেতার একমুখী চলাচল থাকতে হবে অর্থাৎ প্রবেশপথ ও বহির্গমনের পথ পৃথক থাকতে হবে। এছাড়া পশুরহাটে ইজারাদারগণের নিজস্ব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। বৃদ্ধ ও শিশুদের পশুর হাটে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে হবে। পশুরহাটে গুরুত্বপূর্র্ণ স্থানে ইজারাদার কর্তৃক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। জালনোট শনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন স্থাপন করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক কোন সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। কোনো প্রকার চাঁদা আদায় এবং ক্রেতা–বিক্রেতাকে হয়রানি করা যাবে না। হাট পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসকের মনোনীত কর্মকর্তাকে চসিক কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদার সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ইজারা অর্থের ২০ শতাংশ অর্থ ‘৭–ভূমি রাজস’্ব খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ইজারা প্রদানের সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা করতে হবে। এছাড়া অস্থায়ী পশুর হাট বা বাজারে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা অন্য কোন কারণে বা শর্তাদি লঙ্ঘনের করলে অনুমোদিত হাট–বাজার যে কোনো সময় অনুমতি বাতিল করতে পারবে বলেও শর্তে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, চসিকের প্রস্তাবিত ২৩ হাট নিয়ে জেলা প্রশাসন সিএমপির মতামত সংগ্রহ। ১৩ হাট নিয়ে আপত্তি জানায় সিএমপির সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ। এছাড়া সিএমপির আওতাধীন না হওয়ায় একটি হাটের বিষয়ে মতামত জানায়নি।