ওয়াজেদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম কণ্ঠ।
ফরিদপুর থেকে ছয়টি ‘শাহীওয়াল’ জাতের ষাড় এনেছেন আব্বাস বেপারি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির দাম হাঁকান ৯ লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দরদাম করেন। কিন্তু আব্বাস তার দেয়া দামে অনড় থাকায় গরু না কিনেই ফেরত গেলেন ক্রেতা।
গতকাল শনিবার বিকেলে এ দৃশ্য দেখা গেছে নগরীর বিবিরহাট পশুর বাজারে। এ সময় কথা হয় শাহীওয়াল ষাড় কিনতে আগ্রহী ক্রেতা মনছুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি। বিষয়টি স্বীকার করে বেপারি বললেন, পশু খাদ্যের দামসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। পরিবহন খরচও অনেক বেড়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে গরুর দাম বেশি না রাখলে আমাদের পুষাবে না।
জানা গেছে, কোরবান উপলক্ষে ২০ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন বসবে বিবিরহাট পশুর বাজার। যদিও স্থায়ী বাজার হিসেবে সারা বছর সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার বাজারটি বসে। ওই হিসেবে বিগত বছরগুলোতে কোরবানি মৌসুমে এ দুইদিন জমজমাট থাকত বাজারটি। মুরাদপুরসহ আশেপাশে পর্যন্ত গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতেন বিক্রেতারা। তবে গতকাল এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় গতকাল শনিবারেও প্রত্যাশিত বিক্রি হয়নি বলে জানান বাজারটির খাস আদায়ের মাধ্যমে হাসিল আদায়ে জড়িতরা। তারা জানান, বিবিরহাট বাজারে গতকাল অল্পসংখ্যক গরু ও ছাগল বিক্রি হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা দামের একটি কালো রঙের ষাড় বিক্রি হয়। আনুমানিক ৯ মণ ওজনের ষাড়টি অস্ট্রেলিয়ান জাতের। ষাড়টি লালন–পালন করা হয় কুষ্টিয়ার একটি খামারে। এছাড়া বিবিরহাট বাজারে গতকাল সর্বনিম্ন ৪২ হাজার টাকা দামের গরু এবং সর্বোচ্চ ৫৪ হাজার টাকা দামের ছাগল বিক্রি হয়।
বিবিরহাট ছাড়াও নগরের আরো কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর গরু এসেছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল বিক্রিও ভালো হয়েছে। তবে দাম একটু বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, কোরবানের এখনো কয়েকদিন সময় থাকায় মর্জি মাফিক দাম বলছেন বেপারিরা।
গতকাল সাগরিকা পশুর হাটে দেখা গেছে, বাজারটিতে প্রচুর গরু, ছাগল ও মহিষ এনেছেন বেপারিরা। ভিড় ছিল কোরবানিদাতাদের। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর গরু–ছাগল। তবে বেশিরভাগ কোরবানিদাতার দাবি, গতবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি। শহীদ নামে এক ক্রেতা বলেন, দুই ভাই মিলে কোরবানি দেব। তাই মাঝারি সাইজের গরু কিনতে এসেছি। যা দাম বলছে বাজেট অতিক্রম করছে। গতবার ৮৫ হাজার টাকায় মাঝারি সাইজের গরু কিনেছিলাম। এবার একই সাইজের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সাগরিকা পশুর হাট থেকে গতকাল ১ লাখ ২৬ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেন নূর হোসেন। তিনি বলেন, গতবার প্রায় একই সাইজের গরু কিনেছিলাম ৯৫ হাজার টাকায়।
গতকাল জমজমাট ছিল ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ বসা পশুর হাটটিও। বাজারটি থেকে গতকাল ৫ লাখ টাকা দিয়ে দুইটি গরু কিনেন ফেনী–২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারি। গত রাতে এ বাজারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও বেপারিরা গরু নিয়ে আসেন। এর মধ্যে নাজিরহাট থেকে লড়াই করে এমন দুটি গরু নিয়ে আসা হয়। গরুগুলোর নাম দেয়া হয় ‘ফইটার।’
বাজারের ইজারাদার ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে। যেহেতু সময় আছে সামনে বিকিকিনি আরো বাড়বে। তিনি বলেন, দাম সহনীয় আছে।
জানা গেছে, বিবিরহাটসহ নগরে এবার স্থায়ী–অস্থায়ী ১০টি পশুর হাট বসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায়। এছাড়া চৌধুরীহাটের পশুর বাজার থেকে খাস আদায়ের মাধ্যমে হাসিল আদায়ের ঘোষণা দেয় চসিক। ওই হিসেবে ১১টি বাজার বসে চসিকের ব্যবস্থাপনায়। অস্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে– কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়। স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে– সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।
বাজারগুলোতে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুর, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। আছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে নিয়ে আসা গরুও। স্থানীয় বিভিন্ন খামারে হৃষ্টপুষ্টকৃত প্রচুর গরুও আনা হয়েছে বিক্রির জন্য