ডিসেম্বর ৪, ২০২৪ ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে সেন্টমার্টিন চায়নি জানাল যুক্তরাষ্ট্র

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইজারা নিয়ে যে কথা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত হচ্ছে তা ‘সঠিক নয়’ বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

সোমবার রাতের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, “আমি শুধু বলব, এটা সঠিক নয়। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি এবং সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপ নেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনায় আমরা কখনো যুক্ত হইনি।”

বাংলাদেশের নির্বাচন ও নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নানা বক্তব্য ও পদক্ষেপের পর ১৪ দলে আওয়ামী লীগের জোট শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।

এরপর গত সপ্তাহে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখনও যদি বলি যে, না, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি সেটা কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না। ২০০১ সালে বিএনপি ‘গ্যাস বিক্রি করার’ মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? আমি তো এটুকু বলতে পারি যে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা। আমার হাত থেকে এদেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।

এরপর মে মাসের শেষ দিকে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের এসব ভূমিকা নিয়ে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার দেশটির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত এপ্রিলে সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো দেশে ক্ষমতা “উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে”।

পরে বিবিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘হয়ত তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই’ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্য নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে করা প্রশ্নে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্বকে গুরুত্ব দিই। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতাসহ গণতন্ত্রের জন্য একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে চাই।”

বাংলাদেশে নির্বাচন ‘বাধাগ্রস্তকারীদের’ ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লেখেন ছয় কংগ্রেস সদস্য। ওই চিঠিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করারও আহ্বান জানান মার্কিন আইনপ্রণেতারা।

শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশীদের নিষিদ্ধের মতো বক্তব্য যারা দেয়। গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে তাদেরকে বাংলাদেশের ‘শত্রু’ হিসাবে বর্ণনা করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী বা সার্বিক অর্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে শান্তিরক্ষী বাহিনী, যেটা গোটা পৃথিবীতে অব্যাহতভাবে গত ১০ বছর, মাঝে দুই-এক বছর বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী ছিল। প্রায় ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। আহতদের সংখ্যা বাদ দিলেও, এই অর্জনকে যারা খাটো করে দেখছেন বা এই অর্জনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার অপচেষ্টা যারা করছেন, তারা বাংলাদেশের বন্ধু নন, তারা বাংলাদেশের শত্রু। এক্ষেত্রে কংগ্রেসম্যান বা সেনেটর বা প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেই হোন না কেন, তারা আমাদের শত্রু।”

ওই চিঠিদাতাদের বাংলাদেশের শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মিলার বলেন, “ওই চিঠিটি আমি দেখিনি। কোনো মন্তব্য করার আগে আমার চিঠিটা দেখা উচিত।”

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক