মোঃ মহসিন
রাউজানে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। কোরবানির ঈদের পশুর হাট থেকে ছড়িয়ে পড়া এই রোগে একটি গরু মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোগাক্রান্ত পশু নিয়ে দিশেহারা মানুষ গরু বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য ছুটছে। ফুরসত পাচ্ছেন না মাঠ পর্যায়ে তৎপর পশু চিকিৎসকরাও। তবে এই রোগের পর্যাপ্ত প্রতিষেধক নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
জানা যায়, পশু চিকিৎসায় নিয়োজিত অনেকে সরকারি দপ্তরের সনদধারী পশু চিকিৎসক পরিচয়ে রোগের ব্যবস্থাপত্র লিখে আদায় করছেন পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. জপু চক্রবর্তী বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে যারা পশু চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো চিকিৎসক নন। তার দপ্তরে চিকিৎসা দেয়ার মতো আছেন তিনিসহ পাঁচজন। মাঝেমধ্যে ডাক পড়লে তারা গরুর খামারে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসেন।
উপজেলায় লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কোরবানির পশুর হাট থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন তার অফিস থেকে গড়ে ৫০টি গরুর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তিনি জানান, এই পর্যন্ত মারা গেছে একটি গরু। সেটি উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আধারমানিক গ্রামের রুজি আকতার নামে এক নারীর।
গতকাল দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভিতরে–বাইরে গরুর চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ২০ থেকে ৩০ জন নারী–পুরুষ রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এখানে চিকিৎসার জন্য আনা বেশিরভাগ গরুর বয়স ছয় মাস থেকে দুই বছর। চিকিৎসা সেবাদানকারীরা বলছেন, আক্রান্ত পশুর মধ্যে বাছুরের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ।
শরীরে গুটি গুটি চাকায় ভরা গরুর বাছুর নিয়ে এসেছিলেন নুরুল আলম। তিনি চট্রলার কণ্ঠকে জানান, তার তিনটি গরুর মধ্যে দুটি এই রোগে আক্রান্ত। বাছুরটির অবস্থা তুলনামূলকভাবে খারাপ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন।
এখানে পশু নিয়ে আসা অনেকেই বলছেন, গরুর এই রোগ দেখা দিলে প্রথমে গ্রামীণ হাটে যারা পশুর চিকিৎসা করেন তাদেরকে ডেকে চিকিৎসা দিয়েছেন। সরকারি ডাক্তার পরিচয়ে তারা চিকিৎসা ফি নিয়েছেন পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা। সুফল না পেয়ে গরু নিয়ে আসতে হয়েছে সরকারি এই চিকিৎসা কেন্দ্রে।
ডা. জপু চক্রবর্তী চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, কোরবানির ছুটি শেষে অফিস খোলার পর প্রতিদিন গড়ে পঞ্চাশটি গরুকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি খামারে গিয়েও চিকিৎসা দিচ্ছি। তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের অধীনে মাঠ পর্যায়ে কোনো পশু চিকিৎসক নেই। এই অফিসের চিকিৎসা সেবাদানকারীদের নিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তিনি জানান, তার দপ্তরের এই রোগের পর্যাপ্ত প্রতিষেধক নেই। ব্যবস্থাপত্রসহ কিছু পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তার পরামর্শ, রোগবালাই থেকে পশু রক্ষায় গোয়ালঘর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। আক্রান্ত পশুকে অন্য পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। প্রয়োজনে মশারির ভিতর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।