ইমরান নাজির
আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল ও ঘোলাটে করার লক্ষ্যে ধ্বংসাত্মক অপরাজনীতির পথে এগুচ্ছে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, তারা তাদের লবিষ্টের মাধ্যমে বিদেশি মুরুব্বীদের ডেকে এনে নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের যে দাবিটি তুলেছেন; অথচ সেই প্রতিনিধি দলের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা কখনো এব্যাপারে আমাদেরকে কোনো মন্তব্য করেননি। তারা চেয়েছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং তা সংবিধান সম্মতভাবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে একটি অবাধ সুষ্ঠু সংবিধান সম্মত নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের বিষয়টি কখনো আমাদের সাথে আলোচনায় উপস্থাপন করেননি। একারণেই বিএনপি চরম হতাশায় ভুগছে। তারা তারুণ্যের নামে সমাবেশ করছে। কিন্তু দেখা গেছে এই সমাবেশে যারা উপস্থিত আছে তারা ১৮ বছরের নিচে অথবা ষাটোর্ধ এবং অকারণে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও দাতাসংস্থার পরামর্শ অবশ্যই শুনবো। কিন্তু তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এদেশে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান সম্মতভাবে। তিনি গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪ টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়নের শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিটি অসাংবিধানিক এবং এই ব্যবস্থাপনা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের কোথাও নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত উন্নয়নশীল দেশে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে নির্বাচনী সরকার গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই। যদি এই সরকার গঠন হয় তাহলে এদেশে আরেকটি ১/১১’র মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তিনি মির্জা ফখরুলের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যাদের মুরুব্বী মেনেছেন তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রশংসা করেন। আপনারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করলেও আপনাদের সরকার পতনের দফা ভিত্তিক রাজনীতির রহস্য কোথায়? আপনারা বার বার বলেছেন শেখ হাসিনা সরকারের পতন হবে। তিনি দেশ থেকে পালাবেন কিন্তু ঘটনাটা উল্টো হয়েছে। আপনাদের শিখন্দী তারেক জিয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে বিদেশে পলাতক জীবন-যাপন করছেন। খালেদা জিয়াও দুর্নীতি মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিচারাধীন অবস্থায় আছেন। তবে তিনি নিজের গৃহে আছেন। তাকে আমরা কারাগারে পাঠাইনি। আমেরিকা তাদের ভিসা নীতি এবং বাংলাদেশের এলিট আইন শৃঙ্খলা ফোর্সের কিছু বর্তমান ও সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে তারা হতাশ। কেননা নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে এবং কোন ব্যবস্থায় হবে এটা বড় কথা নয়। তাদের মুরুব্বীরা চায় একটি নির্বাচন হোক এবং তা সাংবিধানিকভাবে।
তিনি মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশ্যে বলেন, তিন মেয়াদের ধারাবাহিক ক্ষমতায় যে অভাবনীয় উন্নয়নগুলো হয়েছে তা আপনাদের চোখে পড়ে না? আপনাদের আমলে হাওয়া ভবন খাওয়া ভবনে পরিণত হয়েছিল। সেই দেশটি বাংলাদেশকে খেয়ে শূন্য করে দিয়েছিল। সেই শূন্যতা থেকে বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। তাই এই উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে যারা প্রতিহত করে তাদের প্রতিহত করবো। আমরা চাই দেশ চলবে আমাদের আইনে ও নিয়মে- এটাই শেষ কথা।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রাপূর্ব র্যালির আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি এবং আসবেও না। আমাদের আস্থা ও ভরসা জনগণ। আওয়ামী লীগ ধারাবাহিক ক্ষমতায় থাকায় শেখ হাসিনা যে অভ‚তপূর্ব উন্নয়নগুলো করেছেন তা অতীতে আর হয়নি। বিশ্বের কাছেও বিরল। আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এদেশে আগামিতে স্বাধীনতা বিরোধী কোনো অপশক্তির অস্তিত্ব থাকবে না।
সভাপতির বক্তব্যে মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমরা এই সরকারের আমলে যেসকল উন্নয়নগুলো হয়েছে সে বার্তাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি ও শোভাযাত্রা শুরু করেছি। এই শুরু কখনো শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তি-সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত না হয়।
নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, নোমান আল মাহমুদ এমপি ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু।
এসময় সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. সুনীল কুমার সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টা সফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাছনী, হাছান মাহমুদ শমসের, অ্যাড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মসিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, হাজী জহুর আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, জোবাইরা নার্গিস খান, দিদারুল আলম চৌধুরী, শহীদুল আলম, নির্বাহী সদস্য আবুল মনছুর, কামরুল হাসান বুলু, নুরুল আবছার মিয়া, জাফর আলম চৌধুরী, সৈয়দ আমিনুল হক, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, বখতেয়ার উদ্দীন খান, মহব্বত আলী খান, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, পেয়ার মোহাম্মদ, হাজী বেলাল আহমদ, মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী। শোভাযাত্রায় ১৫টি থানা ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা মিছিল সহকারে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশ শেষে প্রধান অতিথি ড. হাছান মাহমুদ এমপি, মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে বাদ্য-বাজনাসহ শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রাটি বের হয়ে স্টেশন রোড, কোতোয়ালী, লালদিঘী, সিনেমা প্যালেস হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।