সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪ ৫:০৯ অপরাহ্ণ

বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম

ইমরান নাজির | শুক্রবার , ২৮ জুলাই

চট্টগ্রাম বন্দর তিন ধাপ পিছিয়েছে। বিশ্বের ব্যস্ততম একশ’ বন্দরের তালিকায় তিন ধাপ ছিটকে ৬৭তম স্থানে ঠাঁই পেয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। শিপিং বিষয়ক বিশ্বের প্রাচীনতম জার্নাল লয়েডস লিস্ট প্রতি বছরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের উপর ভিত্তলিকা প্রণয়ন করে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, বৈশ্বিক সংকটসহ আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে ধসের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর পিছিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তালিকায় এক নম্বরে চীনের সাংহাই এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিংগাপুর। লয়েডস’র তালিকায় ঠাঁই পাওয়া বিশ্বের প্রথম দশটি ব্যস্ততম বন্দরের ৬টিই চীনের। এছাড়া হংকং তালিকার ৯ নম্বরে, কোরিয়ার বুসান পোর্ট ৭ নম্বরে অবস্থান করছে। তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছে ইউরোপের নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম পোর্ট।

সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের কন্টেনার হ্যান্ডলিংকারী বন্দরগুলোর পুরো বছরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে প্রতিবছর একটি তালিকা প্রকাশ করে লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের প্রাচীনতম শিপিং জার্নাল লয়েডস লিস্ট। বিশ্বের শিপিং সেক্টরে এই তালিকাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর প্রথমবারের মতো এই তালিকায় ঠাঁই ২০১৪ সালে। ওই বছর বিশ্বের একশ ব্যস্ততম বন্দরের মাঝে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৮৬তম। ২০১৫ সালে ৮৭ তম, ২০১৬ সালে ৭৬তম, ২০১৭ সালে ৭১ তম, ২০১৮ সালে ৭০তম, ২০১৯ সালে ৬৪তম, ২০২০ সালে ৫৮ অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের। টানা সাত বছর ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হলেও ২০২১ সালে এসে চট্টগ্রাম বন্দর হুট করে ৯ ধাপ পিছিয়ে যায়। করোনাকালে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য মোটামুটি মুখ থুবড়ে পড়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যার প্রভাব পড়ে তালিকায়। ২০২১ সালেও এর রেশ থেকে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর তালিকার ৬৭তম স্থানে চলে যায়। ২০২২ সালে বন্দর অবস্থান নেয় ৬৪তম স্থানে। এবার আবারো তিন ধাপ পিছিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান চলে গেছে ৬৭তম স্থানে।

বৈদেশিক বাণিজ্য কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর তিন ধাপ পিছিয়েছে বলে মন্তব্য করে সূত্রগুলো বলেছে, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকট এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিলাস দ্রব্য এবং গাড়িবাহী কন্টেনার আসেনি বললেই চলে। ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কড়াকড়ি করেছিল। যার প্রভাব পড়েছে আমদানিতে। আর আমদানি কম হওয়ায় কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে। একইভাবে বৈশ্বিক সংকটে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যার ফলে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেনার হ্যান্ডলিংও কমেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২ সালে মোট ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে। আগের বছর ২০২১ সালে হ্যান্ডলিং করেছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে আমদানি–রপ্তানি কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমেছে ২.২ শতাংশ। যার ধাক্কা লেগেছে লয়েড’স লিস্টে।

চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ২০২২ সালের শুরু থেকে বছরজুড়ে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে অচলাবস্থা তৈরি করেছে এটি তার প্রভাব বলে মন্তব্য করেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক লয়েড’স লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের তিন ধাপ পেছানোর কথা স্বীকার করে বলেন, এটি ইউক্রেন রাশিয়াযুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব। বিলাস দ্রব্য আমদানি কড়াকড়ির কারণে ২০২২ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে। ইতোমধ্যে তা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করে বন্দর সচিব জানান, ২০২৩ সালে তালিকায় আমরা আগের মতো অগ্রসর হবো। এখন চট্টগ্রাম বন্দর স্বাভাবিক গতিতে এগুচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, চীনের সাংহাই বন্দর সর্বমোট ৪ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার ৩শ’ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে লয়েড’স লিস্টের তালিকায় এক নম্বরে অবস্থান করছে। তালিকায় দ্বিতীয় থাকা সিংগাপুর বন্দর হ্যান্ডলিং করেছে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার। তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের নিংবো জুহুসান বন্দর হ্যান্ডলিং করেছে ৩ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক