অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহিদ মালেক বলেছেন, আমরা সব সময় একটা কথা শুনে থাকি, ডাক্তাররা রোগীদের কথা শুনেন না। সে জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল রোগীদের আত্মবিশ্বাসটা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সাথে অ্যাপোলো যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমরা সুন্দর একটা গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখন ৭৫ জন ডাক্তারের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি টিম হয়েছে। এক সময় সেটি ছিল ২৫ জনের। রোগীদের আস্থাও এখন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বলা যায়, আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি আস্থা বেড়েছে। চট্টগ্রামের মানুষকে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা দিতে চাই এবং সেটিই আমাদের চাওয়া। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা থেকেও যদি কেউ আসেন, তাদেরকে যেন আমরা ভালো একটি স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি। গতকাল দুপুরে নগরীর জাকির হোসেন রোডে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি সেন্টারের যাত্রা শুরু উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ওপেন হার্ট সার্জারি সেবা এখন নির্দিষ্ট মূল্যে আপনার হাতের নাগালেই’ এই স্লোগান নিয়ে কার্ডিয়াক সার্জারি সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা কখনো মন থেকে চাই না, কোনো কেউ অসুস্থ হোক। তবে শরীর এমন একটা জিনিস, আমি চাই বা না চাই, আমার বাবা অসুস্থ হবেন, আমার সন্তান অসুস্থ হবেন। আপনাদের পরিবারের লোকজনও অসুস্থ হবেন এবং পৃথিবী থেকে এক সময় চলেও যাবেন। কিন্তু আমরা চাই একটি সুন্দর পরিবেশে সবাই যেন ভালো চিকিৎসা পান। ভুল চিকিৎসার সম্মুখীন যাতে কেউ না হয়। সেটাতে যেন ডাক্তারদের গাফিলতি না থাকে সেটিও আমরা কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করছি।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাখাওয়াত হোসেন শাকিল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে কোনো অপারেশনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। দেখা যায়, কারো হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে তখন অন্য অপারেশন করা হয় না। তখন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হয়। মনে করুন, হৃদরোগের চিকিৎসক এনজিওগ্রাম করলেন, দেখলেন হার্টে একাধিক ব্লক আছে। তখন তিনি পরামর্শ দিলেন তাড়াতাড়ি বাইপাস সার্জারি করতে হবে। এখন কি আমরা বলতে পারবো, ওনার হার্টের অবস্থা ভালো না, আমার হার্টের সার্জারি করবো না। এটা বলার উদ্দেশ্য হলো, কার্ডিয়াক সার্জারি সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ একটি সার্জারি। আল্লাহ আমাদের দক্ষতা দিয়েছেন, তাই আমরা অনায়সে সে কাজটি করছি। সার্জারি থেকে শুরু করে সার্জারি পরবর্তীতে কেয়ারসহ অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে রোগী স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেন। যারা হার্টের সার্জারির জন্য আসেন, তাদের বেশিরভাগ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা নিয়েও আসেন। তবে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ২–৩ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এটাতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকেন মূলত কার্ডিয়াক সার্জনরা। কারণ রোগী তার আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন। অন্যদিকে নিউরোসার্জারির অপারেশনে রোগী যান অচেতন অবস্থায়। ওই যে বললাম, ২–৩ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি থাকে, এখন যদি কোনো রোগী এরমধ্যে পড়েন, তখন রোগীর স্বজনরা বলেন, হায় হায় রোগীটা কত ভালো অবস্থায় ছিল। তবে শেষ কথা হচ্ছে, হৃদরোগীদের ভালো থাকার জন্য অবশ্যই লাইফস্টাইল বদলাতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের হাসপাতালে ম্যানেজ করা প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সাখাওয়াত হোসেন শাকিল বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন পরবর্তী রোগীদের ব্লিডিং হয়, সেক্ষেত্রে আমরা পুনরায় চেক করি। আমাদের এনজিওগ্রামের সুযোগ থাকে। বাইপাস করানোর পর আমাদের আবার রিং লাগানোরও সুযোগ থাকে। তবে আমাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। রোগীর শরীরে হঠাৎ জটিলতা দেখা দিলে সেটি ম্যানেজ করার মতো সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।
হাসপাতালের কার্ডিয়াক অ্যানেসথেসিয়ালজিস্ট ডা. সুমন শিকদার বলেন, এতদিন আমরা কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য ঢাকায় কিংবা বিদেশে যেতাম। তবে এখন থেকে আর কাউকে ঢাকায় কিংবা বিদেশে যেতে হবে না। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন, এই কার্ডিয়াক সেন্টার শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশে ভালো কার্ডিয়াক সেন্টার হিসেবে আমরা তৈরি করতে পারবো। এটি আমাদের বিশ্বাস।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডা. এ এন রাও বলেন, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সুন্দর অবকাঠামো দেখে আপনারা বুঝতে পারছেন, এটির মান কেমন হতে পারে। হাসপাতালে সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালের ডাক্তাররা সব সময় রোগীদের জন্য নিবেদিত।
ইনফেকশন কন্ট্রোল করার জন্য এই হাসপাতাল খুবই ভালো অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে এখানে ইনফেকশনের ঝুঁকি কম থাকে। যেসব রোগী কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য ঢাকার উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য আমরা এখানে কার্ডিয়াক সার্জারির কার্যক্রম চালু করেছি। এছাড়া কোনো রোগীকে প্রয়োজনে যদি ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে যেতে হয়, তবে আমরা অফিসিয়ালি এখন থেকে পাঠাবো, যাতে রোগীর কোনো অসুবিধা না হয়। আপনারা আমাদের ম্যানেজম্যান্টের ওপর ভরসা রাখতে পারেন। আমরা অঙ্গীকার করছি, আমরা আপনাদের সেরা সেবাই দেবো।
হাসপাতালের কার্ডিয়াক কনসালটেন্ট সাইফুর রহমান সোহেল বলেন, আমরা গত ৭ জুলাই প্রথম এখানে কার্ডিয়াক সার্জারি করেছি এবং সফল হয়েছি। এরপর গত বুধবার আরও একটি সার্জারি হয়েছে। সেটাও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের মধ্যে এত কম টাকায় এতো ভালো চিকিৎসার নজির কম।
হাসপাতালের কার্ডিয়াক সেন্টারে প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি করা রোগী মোহাম্মদ আলী সুরুজ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁইয়ায়। আমার হার্টের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে আমি অ্যাপোলে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হই। গত ৭ জুলাই আমার বাইপাস সার্জারি হয়। গত ২০ দিনে আমার অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন আমি অনেক ভালো আছি। রোগীর ছেলে বলেন, অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের কার্ডিয়াক সেন্টারে আমার বাবার প্রথম অপারেশন হবে, এটি জেনে প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলাম। পরে এখানে আসার পর ভয় চলে গেল। আমি ঢাকায় খবর নিয়ে দেখলাম, কার্ডিয়াক সার্জারিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ লাগবে। তবে এখানে আমার খরচ হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে। অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে যত টাকা লাগবে বলেছে তত টাকা নিয়েছে। বাড়তি কোনো টাকা নেয়নি। এটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের হেড অব বিজনেস ডেভলপমেন্ট মানস মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. মাসুদ আহমেদ, চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. প্রকাশ কেএন, চিফ নার্সিং অফিসার শান্তা রানী সাহু প্রমুখ।