চট্টলার কণ্ঠ নিউজ।
চট্টগ্রাম নগরে টানা দুইদিনের জলাবদ্ধতা এবং মানুষের ভোগান্তি ও দুর্ভোগের জন্য সিডিএকে দোষারোপ করলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। একইসঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় না করারও অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে আলাপকালে চট্টলার কন্ঠকে এসব কথা বলেন মেয়র। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র চলমান মেগা প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে মেয়র বলেন, যত দোষ নন্দ ঘোষ, সব মেয়রের দোষ। কিন্তু এ মেগা প্রকল্পে তো মেয়রের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ প্রকল্পে কিছু করার মত ক্ষমতাও নেই মেয়রের।
তিনি বলেন, শুধু খালের দুই পাড়ে ওয়াল দিলে হবে না। খাল থেকে মাটি তুলতে হবে। আমাদের এই অঞ্চলে বিশেষ করে চান্দগাঁও ও বাকলিয়াসহ আশেপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে, এখানে ভরাট হয়ে থাকায় খাল দিয়ে পানি ঠিকভাবে যেতে পারছে না। এখানে চাক্তাই খাল ও বীর্জা খালসহ অন্যান্য খালগুলো পরিষ্কার করতে হবে। তারা একেকটা খাল কতটা গভীর করেছে তা জনগণের জানার অধিকার আছে। প্রকল্পের ডিপিপি’তে ২০ কোটি কিউবেক মাটি উত্তোলনের কথা লেখা আছে। সে পরিমাণ মাটি তুলেছে? মাটি উত্তোলন করা না হলে প্রকল্পের সাফল্য আসবে না।
মেয়র বলেন, কিছুদিন আগে যে সমন্বয় সভা হয়েছিল সেখানে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ’র সমন্বয়ে যৌথ একটি টিম গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছি। এই টিম পর্যবেক্ষণ করে দেখবে কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। খাল কত মিটার গভীর করা হবে, কত ঘনফুট মাটি উত্তোলন করা হবে সে সব পর্যবেক্ষণ করবে কমিটি।
সিডিএ সমন্বয় করছে না অভিযোগ করে মেয়র বলেন, যে ওয়ার্ডে কাজ (মেগা প্রকল্পের) করবে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে বলেছি। তারা (সিডিএ) তো কর্পোরেশনকে কোনো কিছু জানায়ওনি। তারা তাদের ইচ্ছেমত কাজ করছে। এত বড় প্রকল্প, চট্টগ্রামবাসীর বাঁচা–মরার প্রশ্ন, এরপরও তারা সমন্বয় করছে না।
জানা গেছে, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি মিলে সৃষ্ট গত দুইদিন জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে মেয়রের বাড়িও। বহাদ্দারহাটসস্থ মেয়রের বাসার নিচতলায়ও পানি ঢুকে গেছে। মেয়রের বাড়ির সামনের সড়ক ও উঠানেও ছিল প্রায় কোমর সমান পানি। গত শুক্রবার দিনভর অনেকটা পানিবন্দী ছিলেন বাসায়। তবে গতকাল সকালে টাইগারপাসস্থ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। উঠানে পানি থাকায় বাধ্য হয়ে রিকশা করে আরাকান সড়কে এসে গাড়িতে উঠেন তিনি। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে যখন বাসায় ফিরেন তখনও বাসার সামনের সড়কে ও উঠানে পানি ছিল। এবারও বাধ্য হয়ে রিকশা করে বাসায় ঢুকেন তিনি। এ সময় মেয়র উপস্থিত সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, খালের মাটি উত্তোলন করতে হবে। উপর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে দিলাম, কতগুলো পলিথিন পরিষ্কার করে দিলাম সেটাকে তো খাল পরিষ্কার বলা যাবে না।
মেয়র বলেন, বাকলিয়া–চান্দগাঁওসহ আমাদের এই অঞ্চলে অধিকাংশ মানুষ গরিব। তারা ছোট্ট সেমিপাকা ঘরে বাস করে। পানির জন্য তারা খেতেও পারছে না, থাকতেও পারছে না। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ করছে সিডিএ। এ প্রকল্পে সিটি কর্পোরেশনের কোনো হাত নেই। কিন্তু মানুষ সিটি কর্পোরেশনকে গালাগালি করছে। আমি বলেছি, কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো কাউন্সিলরকে ডেকেছে? সিডিএ ওনাদের মত কাজ করছে।