লেলিন মারমা,
বান্দরবানে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা এবং পাহাড় ধসে বিপর্যস্ত এক জেলায় পরিণত হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান।
রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবখানেই কাদা-মাটি এবং ময়লা আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ধোয়ামোছায় ব্যবহারের জন্য স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি এবং বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে সেনাবাহিনী, পৌরসভা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার পানি সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছে দুর্গতরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান, মো. শাহাজালাল, নাছির উদ্দিন জুয়েল বলেন, “বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি বরং আরও বেড়েছে। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সবখানেই। ধোয়ামোছার পরিষ্কার পানি ও খাবার পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। দুর্গন্ধ এবং ময়লা পানি ব্যবহারের কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে।”
এদিকে, পাঁচ দিন পর বান্দরবান জেলায় প্লাবিত এলাকাগুলোর বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। সড়কের পানি নেমে যাওয়ায় চার দিন পর চালু হয়েছে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও। তবে পাহাড় ধসে সড়ক বিধস্ত হওয়ায় রুমা ও থানচি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীর পানিও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে দুর্গতরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে পাঁচ দিন পরও বান্দরবান জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি।
এদিকে, পাহাড় ধসে এবং বন্যায় পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।
বান্দরবান পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সৌরভ দাস শেখর চট্রলার কণ্ঠকে বলেন, “পৌর এলাকাগুলো থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণের কাজ করা হচ্ছে। পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সময় লাগছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত রয়েছে পৌরসভার কর্মীরা।”
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আঞ্চলিক কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, “বন্যায় বিদ্যুৎ সাবস্টেশনগুলো পানিতে ডুবে গিয়ে এবং সংযোগ লাইনে গাছপালা ভেঙে পড়ে ও বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি সচলের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন চট্টলার কণ্ঠ বলেন, “বন্যা ও পাহাড় ধসে বিপর্যস্ত জেলায় পরিণত হয়েছে বান্দরবান। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জেলার সাতটি উপজেলায়। সেগুলোর মধ্যে লামা ও সদর উপজেলায় বেশি। ভয়াবহ এই দুর্যোগে বান্দরবানে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। দুর্গতদের সার্বিক সহযোগিতায় সেনাবাহিনী, প্রশাসন সহ সরকারের সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।”