সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪ ৪:১২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে কুকুর কামড়ানোর ঘটনা

গতমাস জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে হঠাৎ করেই বেড়েছে কুকুরের কামড়ের ঘটনা। এই সময়ে (দুই মাসে) কুকুরের কামড়ের শিকার হয়ে প্রায় ৯শ রোগী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে জুলাই মাসে চিকিৎসা নেন ৪৯৩ জন। আর চলতি আগস্টের ২৩ দিনে সেবা নিয়েছেন ৪৫০ জন। আগস্টের এখনো বেশ কয়দিন বাকি। এই কয়দিনে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, কুকুরের কামড়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া (রক্ত বের হওয়া) রোগীদের র‌্যাবিস ভ্যাকসিনের পাশাপাশি র‌্যাবিস ইমোনোগ্লোবিন (র‌্যাবিক্স আইজি) নামে আরো একটি ইনজেকশন দিতে হয়। তবে র‌্যাবিস ভ্যাকসিনের সরবরাহ থাকলেও হাসপাতালে র‌্যাবিক্স আইজির সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন গরীব রোগীরা। এই র‌্যাবিক্স আইজি বাইরে থেকেই কিনতে হচ্ছে তাদের। প্রতিটি ইনজেকশনের দামও সাড়ে আটশ টাকার কম নয়।

র‌্যাবিক্স আইজি এন্টিবডি ইনজেকশনের সরবরাহ না থাকার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি চট্রলার কণ্ঠকে  বলেন, আমাদের র‌্যাবিস ভ্যাকসিনের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে র‌্যাবিক্স আইজি ইনজেকশনের সরবরাহ এ মুহূর্তে নেই। যদিও খুব গরীব–অসহায় রোগী হলে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে এই ইনজেকশন ফ্রিতে দেয়া হয়ে থাকে। অন্যান্যদের বাইরে থেকে কিনে নিতে হয়। রোগীর শরীরের ওজন ভেদে এই ইনজেকশনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অবশ্য অনেক রোগীর অভিযোগ, তাদের ভ্যাকসিন ও র‌্যাবিক্স আইজি ইনজেকশন দুটোই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে একটিও দেয়া হয়নি।

কয়েকদিন আগে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত সায়মা খানম  জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান। বিদ্যুৎ অফিসে বিল দিয়ে ব্যাটারি গলির নিজেদের বাসায় ফেরার পথে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় আক্রান্ত হন তিনি। সেখান থেকে সোজা চলে যান হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে বলে তাকে জানানো হয়। ওইসময় সঙ্গে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তাকে (ওই নারীকে) আবার বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে এসে ভ্যাকসিন ও ইনজেকশন কিনে দিতে হয়েছে। তিন ডোজ দিতে তার প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি। আরো একাধিক রোগী একই রকম তথ্য দিয়েছেন। তারা বলছেন, সাপ্লাই নেই বলে হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে না। বাইরে থেকেই তাদের কিনে নিতে হয়েছে।

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য সময়ে (নিয়মিত) কুকুরের কামড়ের শিকার হয়ে মাসে আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নেন। কিন্তু গত জুলাই থেকে এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। জুলাই এক মাসেই সাড়ে চারশ রোগী এসেছে। আগস্ট মাসেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুকুরের কামড়ের শিকার রোগীদের মাঝে নারী–পুরুষের পাশাপাশি শিশুর সংখ্যাও কম নয়। তবে শহরের বাইরে বোয়ালখালী উপজেলা থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা বলছেন, কুকুর, বিড়াল বা অন্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব র‌্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে হয়। তবে আক্রান্ত স্থানে ক্ষত সৃষ্টি বা রক্ত বের হলে সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের পাশাপাশি আরআইজি এন্টিবডি ইনজেকশনও দিতে হয়। আক্রান্ত রোগীকে এখন অন্তত তিনটি ডোজ নিতে হয়। আগে চারটি ডোজের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ডোজের সংখ্যা কমিয়ে তিনটি নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাইরে থেকে কিনতে গেলে প্রতিটি র‌্যাবিস ভ্যাকসিনের দাম পড়ে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা। আরআইজি ইনজেকশনের প্রতিটির দাম সাড়ে আটশ টাকা।

এদিকে, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ের শিকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী হাসপাতালে সেবা নিয়ে থাকেন। অন্যান্য প্রাণীর কামড়ের শিকার হয়ে জুলাই মাসে ৭৪৩ জন এবং চলতি আগস্ট মাসে ৫৫২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক