এসএসসিতে সর্বোচ্চ জিপিএ (জিপিএ–৫) পেয়েও একাদশে ভর্তির প্রথম পর্যায়ের ফলাফলে কলেজ জুটেনি চট্টগ্রামের ৫০১ জন শিক্ষার্থীর। এদের সিংহভাগই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ জিপিএ–৫ ধারী। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এবার প্রথম দফা প্রকাশিত ফলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এসএসসিতে জিপিএ–৫ পায় ১১ হাজার ৪৫০ জন। তবে পুনঃনিরীক্ষণে এবার রেকর্ড ১৬২ জন নতুন করে জিপিএ–৫ পেয়েছে। এতে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশের পর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ–৫ প্রাপ্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬১২ জনে। এর মাঝে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ জিপিএ–৫ পাওয়া মোট ১১ হাজার ৬১২ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য আবেদন করে ১১ হাজার ৫৭৩ জন। এর মাঝে ১১ হাজার ৭২ জন প্রথম পর্যায়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ জিপিএ–৫ পেয়েও ৫০১ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রথম পর্যায়ের তালিকায় কলেজ পায়নি। গত ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একাদশে ভর্তির প্রথম পর্যায়ের ফল প্রকাশিত হয়। আবেদনকারীদের মাঝে চট্টগ্রামের সবমিলিয়ে ৮ হাজার ৭০১ শিক্ষার্থী প্রথম তালিকায় ঠাঁই পায়নি।
সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদনের সুযোগ থাকলেও আবেদনে কম সংখ্যক কলেজ পছন্দ দেয়ায় জিপিএ–৫ প্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থী কলেজ পায়নি বলে মনে করেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, জিপিএ–৫ পাওয়া এসব শিক্ষার্থী গড়ে ৫টির মতো কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদন করেছে। অথচ সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদনের সুযোগ ছিল। সর্বোচ্চ সংখ্যক কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদন না করায় জিপিএ–৫ পেয়েও এসব শিক্ষার্থী প্রথম তালিকায় কলেজ পায়নি। অবশ্য, এসব শিক্ষার্থীর আবেদন আপডেট করার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য চট্টগ্রামের ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করে। এর মধ্য থেকে কলেজ ভর্তির জন্য প্রথম তালিকায় নির্বাচিত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ জন। হিসেবে আরো ৮ হাজার ৭০১ শিক্ষার্থী আবেদন করেও প্রথম তালিকায় কলেজ পায়নি। এর মাঝে জিপিএ–৫ পাওয়া ৫০১ শিক্ষার্থীও রয়েছে।
প্রথম তালিকায় কলেজ না পাওয়ায় ভর্তির জন্য মনোনয়ন পেতে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীকে। ওই দিন (১৬ সেপ্টেম্বর) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশ করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটি। এর আগে ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২য় দফায় পুনরায় আবেদন করতে হবে এসব শিক্ষার্থীকে। তবে ২য় দফায় আবেদনকালে তাদের আর আবেদন ফি দিতে হবে না। অর্থাৎ কলেজের পছন্দক্রম পরিবর্তন, নতুন কলেজ যুক্তকরণ বা কোনো কলেজ বাদ দেয়ার মাধ্যমে আগের (প্রথম দফায় করা) আবেদনটি আপডেট বা সংশোধন করলেই চলবে।
অন্যদিকে, প্রথম তালিকায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হওয়া শিক্ষার্থীদের আজ বৃহস্পতিবার থেকে রোববার (৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার মধ্যে নির্ধারিত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৩৫ টাকা ফি পরিশোধ করে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন সম্পন্ন না করলে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর মনোনয়ন ও আবেদন দুটোই বাতিল বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৫০ টাকা ফি দিয়ে তাদের পুনরায় নতুন করে আবেদন করতে হবে। আর প্রাথমিক নিশ্চায়ন সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা তাদের আবেদনে দেয়া পছন্দক্রমের উপরের দিকের কলেজে অটো মাইগ্রেশনের সুযোগ পাবে। মাইগ্রেশনের জন্য আলাদা আবেদনের প্রয়োজন নেই।
জিপিএ–৫ পেয়েও ভর্তির জন্য তালিকায় ঠাঁই না পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, সর্বোচ্চ দশটি কলেজে আবেদনের সুযোগ থাকলেও জিপিএ–৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী পছন্দের ক্ষেত্রে ৫/৬টির বেশি কলেজ দেয়নি। তাদের ধারণা ছিলো জিপিএ–৫ পাওয়ায় ৫/৬টি কলেজে আবেদন করলেই হবে। আর বেশি করার দরকার নেই। কিন্তু যেসব কলেজে তারা আবেদন করেছে সেসব কলেজে তাদের তুলনায় বেশি নম্বর প্রাপ্ত আবেদনকারীর সংখ্যা হয়তো বেশি ছিল। যার কারণে আবেদন করা ওই ৫/৬টি কলেজের একটিতেও তাদের সুযোগ হয়নি। কিন্তু সর্বোচ্চ সংখ্যক (দশটি) কলেজে আবেদন করলে এ সমস্যা হতো না। আবেদন চলাকালীন সর্বোচ্চ সংখ্যক কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদন করতে শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের প্রতি আমরাও বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই তা করেনি। অতি আত্মবিশ্বাসের কারণেও অনেকে ৫/৬টির বেশি কলেজ পছন্দ দেয়নি। যার কারণে সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী হয়েও তারা প্রথম পর্যায়ের ফলাফলে ভর্তির জন্য কোনো কলেজে মনোনীত হয়নি।
এরপরও এসব শিক্ষার্থীর কলেজ পাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই জানিয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন, সবমিলিয়ে কলেজগুলোর মোট আসন সংখ্যার তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা কম। যার কারণে সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রামে আসন সংকট হবে না। যদিও কাঙ্ক্ষিত কলেজ হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে সব শিক্ষার্থীই কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। যারা প্রথম তালিকায় মনোনয়ন পায়নি, তাদের পরবর্তী তালিকায় মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক।
শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখার তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে এবার ২৮২টি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন রয়েছে। অনুমোদিত এসব কলেজে সবমিলিয়ে আসন সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯টি। বিপরীতে বোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য এবার আবেদন করেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫১ জন। সে হিসেবে একাদশে ভর্তিতে আসন সংকট থাকছে না। বরঞ্চ আরো ৫১ হাজার ৯৮৮টি আসন শূন্য থাকবে।