বাংলাদেশের ৮৬টিরও বেশি পৌরসভার নগর উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে ফ্রান্স। গতকাল সোমবার দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর শেষে দুই দেশের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স পর্যবেক্ষণ করেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সার্বভৌমত্ব, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার সমর্থনে টেকসই ও স্থিতিস্থাপক খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থায় তাদের সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগিতা সহায়তার গভীর প্রশংসা করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ৮৬টিরও বেশি পৌরসভার নগর উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্টের সাথে ২০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফ্রান্স থেকে এয়ারবাসের ১০ উড়োজাহাজ নেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতির জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায়। দুই দেশ বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে উন্নত এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অব্যাহত সহযোগিতার গুরুত্বের ওপরও জোর দেয়। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স বন ও জলাভূমি দ্বারা প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ ইকোসিস্টেম পরিষেবাগুলির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। বাংলাদেশ ফ্রান্সকে বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহারে যৌথ উদ্যোগ অন্বেষণের আমন্ত্রণ জানায়। খবর বাংলানিউজের।
ফ্রান্স ও বাংলাদেশ যুদ্ধের বৈশ্বিক পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে–তা আর্থিক, অর্থনৈতিক এবং খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তার ওপর–সমস্ত জাতির ওপর প্রভাব ফেলে, এবং সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য একসাথে জড়িত হওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতির কথা জানায়। ফ্রান্স জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে আফ্রিকায় বাংলাদেশের অগ্রণী অবদানের প্রশংসা করে। উভয় দেশ সংঘাত, সহিংসতা এবং নৃশংস অপরাধের কারণে বাস্তুচ্যুতদের জন্য জরুরি এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে ফ্রান্স। উভয় দেশই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে, যেন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এমন পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই তাদের পৈতৃক জন্মভূমিতে দ্রুত প্রত্যাবর্তন করা যায়। রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমার মামলায় অন্যান্য অংশীদারদের সাথে পাশে থাকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে ফ্রান্স। এছাড়া ফ্রান্স বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কার্যক্রমে অতিরিক্ত এক মিলিয়ন ইউরোর অনুদান ঘোষণা করেছে।
যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০৪১ সালে একটি স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্পের জন্য দুটি দেশ এয়ারবাস এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) মধ্যে একটি মহাকাশ অংশীদারিত্বকে স্বাগত জানায়, যা একটি মহাকাশ জাতি হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং এটি তার নিজস্ব দক্ষতা অর্জন করবে।
এছাড়া বাংলাদেশ ও ফ্রান্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আইসিটি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ প্রত্নতত্ত্বের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক মিশনের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতার প্রশংসা করে এবং অন্যান্য সম্ভাব্য খনন ও পুনরুদ্ধার মিশনের বিষয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়। উভয় দেশই তাদের সাংস্কৃতিক সহযোগিতার আরও উন্নয়নে আগ্রহের কথা স্বীকার করে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অঁলিয়াস ফ্রাসিসের প্রধান ভূমিকার কথা উল্লেখ করে। উভয় দেশই বহুভাষিকতার গুরুত্ব স্বীকার করে এবং বাংলাদেশে ফরাসি ভাষা এবং ফ্রান্সে বাংলা ভাষা শেখার প্রসারে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স তাদের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করতে চায়
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দুই দিন সফর শেষে গতকাল সোমবার ঢাকা ছেড়েছেন।