ডিসেম্বর ৩, ২০২৪ ৬:২৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে কমেছে জাহাজের আনাগোনা

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের আনাগোনা কমে গেছে। একইসাথে তিনটি কন্টেনার জেটি খালি থাকার মতো ঘটনাও ঘটছে। দিনের পর দিন অপেক্ষা করে বার্থিং পাওয়ার জন্য জাহাজগুলোকে হিমশিম খেতে হতো। বর্তমানে সেখানে উল্টো দিনের পর দিন জেটি খালি থাকছে। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ একটি জাহাজও নেই। বিদেশ থেকে কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজ সরাসরি জেটিতে বার্থিং নিচ্ছে।

খোলা পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা আগেই কমে গিয়েছিল। গত কিছুদিন ধরে কন্টেনার জাহাজের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে জাহাজ আসার পরিম

চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের অন্তত ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয় দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরকে বলা হয় দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার। এই বন্দরে ১৩টি সাধারণ বার্থ, চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) ৩টি জেটি, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে ৫টি জেটি, ২টি ডলফিন জেটি এবং ৬টি রিভার মুরিং জেটি মিলে বন্দরে একই সাথে ৩২/৩৩টি জাহাজ বার্থিং দেওয়া যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭টি মূল জেটির মধ্যে ১ নম্বর জেটি এখন আর হিসেবে ধরা হয় না। ২ থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত জেটির মধ্যে ১২ নম্বর জেটিতেও জাহাজ ভিড়ানো হয় না। সাধারণ কার্গো বার্থের ১১টিতে জাহাজ বার্থিং দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭টি জেটিতে খোলা পণ্যবাহী জাহাজ এবং বাকি ৪টিতে কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দেওয়া হয়। এছাড়া সিসিটির ২টি এবং এনসিটির ৪টি মিলে ১০টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ ভিড়ানো হয়। কিন্তু কন্টেনার জাহাজের চাপ বেড়ে গেলে জেনারেল কার্গো বার্থে একটি জেটি কন্টেনার জাহাজের জন্য দেওয়া হয়। এনসিটি ১ নম্বর জেটিতে শুধুমাত্র পানগাঁও টার্মিনালের জাহাজ ভিড়ানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি এবং এনসিটির সবগুলো জেটিতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। বাকি জেটিগুলোতে শোর হ্যান্ডলিং ক্রেন দিয়ে কার্গো এবং কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়।

বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা কমে গেছে। খোলা পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা বেশ কিছুদিন ধরে কমলেও প্রতিটি কন্টেনার জেটিতে জাহাজ থাকত। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কন্টেনার জেটি খালি থাকছে। বন্দরের বার্থিং রিপোর্ট পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত তথ্য দেখা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর ১১ নম্বর জেটি খালি ছিল। ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর ওই জেটিতে কোনো জাহাজ ছিল না। ৬ তারিখ মাত্র একদিন জাহাজ থাকলেও পরদিন এই জেটি আবার খালি হয়ে যায়। ১০ সেপ্টেম্বরে বদরের দুটি কন্টেনার জেটি জাহাজশূন্য হয়ে পড়ে। ওইদিন ৯ এবং ১০ জেটিতে বার্থিং দেওয়ার মতো জাহাজ ছিল না। ১১ সেপ্টেম্বর আবার ১১ নম্বর জেটি খালি হয়ে পড়ে। ১৪ সেপ্টেম্বরও এই জেটি খালি থাকে। ১৭ সেপ্টেম্বর ১০, ১১ ও ১৩ নম্বর জেটি খালি হয়ে পড়ে। একইসাথে তিনটি কন্টেনার জেটিতে বার্থিং দেওয়ার মতো কোনো জাহাজ না থাকার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর বন্দরের ১০ ও ১১ নম্বর জেটি জাহাজশূন্য থাকে।

বন্দরে ১০টি জেটিতেই কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুই–তিনটি জেটি শূন্য থাকার ঘটনা উদ্বেগের বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে। গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ কোনো জাহাজও ছিল না। সিঙ্গাপুর, কলম্বো কিংবা মালয়েশিয়া থেকে কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরের জেটিতে বার্থিং নিচ্ছে।

শিপিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের ভর মৌসুম বিরাজ করলেও এবার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বাজেট–পরবর্তী সময়ে আমদানি বাণিজ্যে নতুন গতি আসার কথা। কিন্তু এবার আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক গতি থেকে বেশ দূরে রয়েছে। বন্দরে জাহাজের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও বহির্নোঙর শূন্য।

কয়েকজন আমদানিকারক গতকাল বলেন, সবকিছুর আমদানিই কমে গেছে। জরুরি না হলে কোনো পণ্য আনা হচ্ছে না। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকট এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ডলার সংকটের কারণে কোনো ব্যাংকে এলসি খোলার স্বাভাবিক গতি নেই। শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে হচ্ছে। যেটি অসম্ভব ব্যাপার। এতে করে আমদানির স্বাভাবিক গতি নেই। জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ডলারের চড়া মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জিনিসপত্র আগের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বড় ধরনের ঝুঁকি বিরাজ করছে। অনেক আমদানিকারক ব্যবসা গুটিয়ে বসে আছেন। আবার ভোক্তা পর্যায়ে জিনিসপত্রের ব্যবহার কমেছে। আগের তুলনায় অন্তত ২০/২৫ শতাংশ পণ্য কম ব্যবহার হচ্ছে, যা আমদানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সবকিছু মিলে পরিস্থিতি অনুকূল নয়।

প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরে ৪ হাজার ২৫৩টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল ৪ হাজার ২৩১টি জাহাজ। চলতি অর্থবছরে এই সংখ্যা অনেক কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক