আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে বহু আগে থেকেই। দলীয়ভাবে তিনশ আসনেই চালানো হয়েছে একাধিক জরিপ। সবগুলো জরিপেই ৩শ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে ক্লিন ইমেজের ১শ জনের নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তা পাওয়া গেছে বলে দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের এই জরিপে তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। প্রথমে রয়েছে গ্রিন, দ্বিতীয় ধাপে ইয়েলো এবং তৃতীয় ধাপে রয়েছে রেড।
বলা যায়, আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের এই ১শ জনের মনোনয়ন নিশ্চিত। জরিপে তারা গ্রিন তথা প্রথম ধাপে রয়েছেন। অর্থাৎ এরা আবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এই প্রার্থীদের ইতোমধ্যে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কোনো বড় রকমের নাটকীয়তা না হলে ২০২৪ এর সংসদ নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, একাধিক জরিপের প্রথম পর্যায়ে থাকা ক্লিন ইমেজের এই ১শ আসনে প্রার্থীদের (এলাকায় যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, ব্যক্তিগত ইমেজ ভালো, বিগত দিনগুলোতে যাদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মী এবং জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল এবং আছে, যারা শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচনে নিজস্ব ইমেজে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন) চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। জরিপের তিনটি ধাপের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ‘ইয়োলো’ মার্ক যারা পেয়েছেন তাদেরকেও শেষ মুহূর্তে বিবেচনা করা হবে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে অনেকে আবারো মনোনয়ন (যদি সংশ্লিষ্ট আসনে তাঁর চেয়ে ভালো প্রার্থী না থাকে) পেতে পারেন। তবে রেড মার্ক যারা পেয়েছেন তাদের এবার কপাল পুড়তে পারে অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন সংসদ সদস্যরা মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেসব আসনে নতুন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দেয়া হবে বলে জানা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চালানো জরিপে ওঠে আসা ক্লিন ইমেজের ১শ’ সংসদ সদস্যের তালিকায় চট্টগ্রামের সাতজন সংসদ সদস্য রয়েছেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিবে। এরমধ্যে ৫ থেকে ৬ আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়া হতে পারে।
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে ইতোমধ্যে খবর নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের জন্য এই ১৬ আসনে প্রায় শতাধিক প্রার্থী মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা রাজনৈতিক–সামাজিক নানা কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে যাচ্ছেন। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ১৬ আসনের মধ্যে হাটহাজারী জাতীয় পার্টিকে এবং ফটিকছড়ি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনকে ছেড়ে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের ১৪ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এবার হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ি আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিচ্ছে বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এরমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ৯৭ আসনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই ৯৭ আসনে প্রার্থীর তালিকায় চট্টগ্রামের ৫টি আসনের প্রার্থীদের নাম রয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রামের আরো ২টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত তালিকায় আছে বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ১শ’ জনের তালিকায় উত্তর চট্টগ্রামের ৪জন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২জন এবং মহানগরীর ১টি আসনে সংসদ সদস্যের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের তফসিল আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হতে পারে। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
নির্বাচন কমিশন তফসিল ও ভোটের দিনের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ দিনের ব্যবধান রাখার কথা ভাবছে, যা গত দুই নির্বাচনের সময় ৪০ থেকে ৫২ দিনের ব্যবধান ছিল।