ইমরান নাজির।
ভূমি বিরোধের এক মামলায় গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানার দুজন এএসআই গিয়ে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শহীদুল্লাকে থানায় নিয়ে যান। তিনি হার্টের পেশেন্ট; তার ইনহেলার আর মেডিসিন লাগে সবসময়। তাকে থানায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইনহেলার ও মেডিসিনও তার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। পরে ১২টার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হয় রাত সাড়ে ১২টায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় দুদকের সাবেক এ কর্মকর্তার এমন দাবি শহীদুল্লার পরিবার বলছেন, ‘পরিকল্পিতভাবেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
নিহত শহীদুল্লার ছেলে নাফিজ শহীদ বুধবার (৪ অক্টোবর) বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিভিল ড্রেসের দুইজন পুলিশ পরিচয়ে বাবাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় আমরা ওয়ারেন্ট দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি। পুলিশ যখন বাবাকে বাসা থেকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমার চাচারাও পেছনে পেছনে গিয়েছেন। চাচারা যখন থানায় যান, তখন থানার কলাবসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাবা নিয়মিত ইনহেলার নিতেন। বাইরে থেকে চাচারা ওষুধ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ ওষুধ দিতে দেয়নি। পরে বাবা যখন মারা গেছেন, তখন অসুস্থ বলে পুলিশ বাবাকে হাসপাতালে নেয়।’
নাফিজ অভিযোগ করে বলেন, জমি নিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে আমাদের মামলা চলছিল। তারা বেশ প্রভাবশালী। মামলা নিয়ে সবসময় টাকা-পয়সা খরচ করেন তারা।
চট্টগ্রাম চান্দগাঁও থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার দেড় ঘণ্টা পর মারা যাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক এ উপ-পরিচালকের নাম ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লা। নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউতে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
জানতে চাইলে সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. মোখলেছুর রহমান চট্টলার কন্ঠকে বলেন, ‘সিআর মামলায় উনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। আমাদের ফোর্স তাকে থানায় নিয়ে আসলে তিনি দুদকের সাবেক কর্মকর্তা পরিচয় দেন এবং হার্টের প্যাশেন্ট বলে দাবি করেন। তখন তাকে আর হাজতে নেওয়া হয়নি, ওসির রুমেই বসানো হয়েছে।’
তার পিছন পিছন পরিবারের সদস্যরা এসে থানায় উপস্থিত হয়েছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থবোধ করলে থানা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। কিন্তু শহীদুল্লার ভাইয়েরা সিএনজি অটোরিকশা যোগা উনাকে পার্কভিউ হসপিটালে নিয়ে যান, সঙ্গে আমাদের ফোর্স ছিল। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
শহীদুল্লার স্বজনদের দাবি, জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাদের বিরোধ ছিল। মামলার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। রাত ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানার দুজন এএসআই গিয়ে শহীদুল্লাকে থানায় নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে স্বজনরা থানায় যান। উনি হার্টের পেশেন্ট; উনার ইনহেলার আর মেডিসিন লাগে সবসময়। তাকে থানায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফটক বন্ধ করে দেন। ইনহেলার ও মেডিসিনও তার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। পরে ১২টার দিকে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
এই ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) পঙ্কজ দত্ত। কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বয়স বিবেচনায় পরিবারের সদস্যরা আমাদের কাছে ময়না তদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু যেহেতু আমাদের হেফাজতে আনার পর তিনি অসুস্থবোধ করায় হাসপাতালে সেখানে মারা গেছেন তখন কিছু আইনি বিষয় এসে যায়। আইন অনুযায়ী ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রে স্যার অথবা তাঁর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সুরতহাল হবে। ময়নাতদন্ত হবে। পরবর্তীতে সব কিছু নিষ্পত্তিতে ওই প্রতিবেদন দরকার হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলাম চট্রলার কন্ঠকে বলেন, একটা সিআর মামলায় শহীদুল্লার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। গ্রেপ্তারের পর খারাপ লাগছে বলে আমাদের জানান। তখন আমার কক্ষে এনে বসিয়েছি। উনাকে থানায় আনার সঙ্গে সঙ্গে উনার ভাই-স্বজনরা এসেছেন। পরে তার ভাইদের সঙ্গে উনাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।