সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪ ৫:১৭ অপরাহ্ণ

ডিজিটাল ব্যাংকিং এর লাইসেন্স পেল নগদ

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার (২২ অক্টোবর) দুটি ডিজিটাল ব্যাংককে লাইসেন্স দিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মোট আবেদন পড়েছিল ৫২টি। লাইসেন্স পাওয়া ডিজিটাল ব্যাংক দুটি হচ্ছে—নগদ ডিজিটাল ব্যাংক ও এসিআইয়ের কড়ি ডিজিটাল।

এছাড়া কয়েকটি প্রথাগত ব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত আরও তিন আবেদনকারীকে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

nagad

তাছাড়া ফিনটেক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য কিছু কোম্পানির উদ্যোগে গঠিত আরও তিন আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ছয় মাস পর লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে। তবে প্রথমে অনুমতি পাওয়া দুই ডিজিটাল ব্যাংকের পারফরম্যান্স পর্যালোচনার পর তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই লাইসেন্সগুলোর অনুমোদনের পর নগদ ও কড়িকে লেটার অভ ইনটেন্ট (এলওআই) বা সম্মতিপত্র দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এলওআইতে ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে অবকাঠামো স্থাপন এবং সেবা চালু করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হবে।

ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো ফিজিক্যাল শাখা, উপশাখা কিংবা এটিএম থাকবে না। এছাড়া সশরীর লেনদেন সেবাও দেবে না এ ব্যাংক। চলতি বছরে ১৪ জুন ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর জন্য এই পরিচালন নির্দেশিকাগুলো জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালিত হবে ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত গাইডলাইন অনুসারে।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গঠিত মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) নগদ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘আগামী বছরের ২৬ মার্চ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করার পরিকল্পনা করছি আমরা।’ নগদ যেহেতু আগে থেকেই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তাই তারা ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দ্রুত চালু করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।

এসিআই গ্রুপের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর মনির হোসেন খান  গণমাধ্যমকে  বলেন, এসিআই, স্কয়ার, ইস্পাহানি, প্যারাগন, ট্রান্সকম এবং আরও কয়েকজন ব্যক্তির যৌথ উদ্যোগে গঠিত কড়ি ডিজিটাল। কড়ি ডিজিটালের স্পন্সর ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আইটি উদ্যোক্তা হাবিবুল্লাহ এন করিম, এমটিবির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান, রায়হান শামসি এবং আব্দুল মোনেদ লিমিটেডের মাইনুদ্দিন মোনেম।

মনির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘মূলধন কীভাবে তোলা হবে এবং ডেডলাইনের মধ্যে কীভাবে অবকাঠামো তৈরি করা হবে, সেটি এখন স্পন্সররা বসে সিদ্ধান্ত নেবে।’ মো. মেজবাউল হক জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিনটি কমিটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আসা ৫২টি আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করেছে।

এরপর কমিটিগুলো সতর্কতার সঙ্গে নয়টি সম্ভাব্য ডিজিটাল ব্যাংকের একটি তালিকা তৈরি করেছে, যা পরের রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। বিবেচনায় নেওয়া নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি বিমা কোম্পানির জমা দেওয়া ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রস্তাব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড।

৬ মাস পর কাদের লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে?

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, নগদ ও কড়ি চালু হওয়ার ৬ মাস পর তাদের সেবা পর্যালোচনা করে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে। এগুলো হলো—জাপান বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক ও স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক।

এর মধ্যে জাপান বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি জাপানের প্রতিষ্ঠান জাপান রেমিট ফাইন্যান্স এবং আরও কিছু দেশীয় কোম্পানি ও ব্যক্তির যৌথ উদ্যোগ।

তবে নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক ও স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংকের স্পনসর কারা, তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো খোলার অনুমতি পেল কারা?

বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক, ডিজি টেন ও ডিজিটাল ব্যাংককে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা গাইডলাইন জারি করা হবে।

১০ ব্যাংকের উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক খোলার জন্য একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়েছে—এই ১০ ব্যাংকের একটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা ১০টি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আবেদন করেছি। সেজন্য আমরা বিভ্রান্ত। এই কনসোর্টিয়াম কীভাবে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো খুলবে?’

এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স এবং আরও কিছু স্পন্সররের যৌথ উদ্যোগ হচ্ছে বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি।

ডি‌জি টেন গঠিত হয়েছে সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের উদ্যোগে।

ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো সম্পর্কে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘হয়তো নতুন গাইডলাইনে বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।’

ফিনটেক ও অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগের কনসোর্টিয়াম হচ্ছে ব্যাংক এশিয়ার নেতৃত্বাধীন ডিজিটাল ব্যাংক। এ ব্যাংকে ব্যাংক এশিয়ার শেয়ারের পরিমাণ ১০ শতাংশ।

ব্যাংক এশিয়ার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘কনসোর্টিয়ামের মধ্যে কাকে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো খোলার অনুমতি দেওয়া হবে অথবা সব স্পনসরকেই অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।’ তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো খোলার জন্য কনসোর্টিয়ামের একজন আবেদনকারীকে প্রথমে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে হবে। তাদের লাইসেন্স ফি জমা দিতে হবে না।

ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য যা লাগবে

ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর প্রথাগত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন লাগে ৫০০ কোটি টাকা।

গাইডলাইন অনুসারে, ডিজিটাল ব্যাংকে প্রত্যেক স্পনসরের সর্বনিম্ন শেয়ারহোল্ডিং হবে ৫০ লাখ টাকা (সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ১২.৫ কোটি টাকা)।

ডিজিটাল ও প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের পার্থক্য

ডিজিটাল ও প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের মধ্যে সবসময় সুস্পষ্ট পার্থক্য বজায় থাকে না। অনেক প্রথাগত ব্যাংকেরই এখন শক্তিশালী অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ফলে ডিজিটাল ব্যাংকের অনেক সেবাও প্রচলিত ব্যাংকের মাধ্যমে পাওয়া যায়।

সেবার পরিসর অনুযায়ী নিজেদের সুবিধামতো ডিজিটাল ও প্রথাগত ব্যাংকিং সেবা বেছে নেন গ্রাহকরা।

তারপরও ডিজিটাল ও প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

ডিজিটাল ব্যাংকগুলো সব ধরনের ব্যাংকিং সেবাই দেয় অনলাইনে। ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো ফিজিক্যাল শাখা থাকে না। আর প্রথাগত ব্যাংকের ফিজিক্যাল শাখা তো থাকেই, সঙ্গে তারা অনলাইন ব্যাংকিং সেবাও দেয়।

ডিজিটাল ব্যাংকের পরিচালন খরচ সাধারণত কম হয়, কারণ এ ব্যাংকের ফিজিক্যাল শাখার প্রয়োজন হয় না। এর ফলে ডিজিটাল ব্যাংক ফি কম নিতে পারে, আবার আমানতের ওপর বেশি সুদ এবং বেশি প্রতিযোগিতামূলক সুদে ঋণ দিতে পারে।

ডিজিটাল ব্যাংক মূলত সঞ্চয়, ঋণ ও পেমেন্টের মতো মূল ব্যাংকিং সেবাগুলো দেয়—সঙ্গে থাকে উদ্ভাবনী ফিনটেক পণ্যও। অন্যদিকে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ড আর্থিক পণ্য থেকে শুরু করে আর্থিক সেবা পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্যাংকিং, বিনিয়োগ, বিমা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনাও রয়েছে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যে।

মোবাইল চেক ডিপোজিট, বাজেটিং টুল ও রিয়েল-টাইম অ্যালার্টসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেয় ডিজিটাল ব্যাংক। অবশ্য ধীরগতিতে হলেও প্রথাগত ব্যাংকগুলোও ডিজিটাল প্রতিযোগিতার প্রতিক্রিয়ায় তাদের অনলাইন ও মোবাইল পরিষেবাগুলো উন্নত করেছে।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক