রাজধানী ঢাকার মহাসমাবেশে পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামের এক যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মুরাদ চৌধুরী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পূর্ব সফরভাটা এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
র্যাব জানায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী তার অনুসারীদের নিয়ে মহাসমাবেশ স্থলে অবস্থান নেয়। মঞ্চে অবস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল যে, পুলিশের উপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলা চালিয়ে তদের মনোবল ভেঙে দেওয়া। ওই নির্দেশনা মেনে কাকরাইলে উপস্থিত কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করলে, পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলের সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি পার্টি অফিস সংলগ্ন ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী তার অনুসারীদের নিয়ে পুলিশের উপরে হামলার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়। অগ্রসরমান দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায় এবং অপর অংশটি ছাত্রদল নেতা আমান এবং জাকির হোসেন জসিমের নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের অপর প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পর ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের উপরে অতর্কিত হামলা করে। ওই হামলার প্রেক্ষিতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে অপর প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ সদস্যদের উপর ছাত্রদল নেতা আমান, যুবদল নেতা জাকির হোসেন জসিম এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে।
নাশকতাকারীদের বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে যান। এমন সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে। উপর্যপুরি আঘাতের ফলে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং তার রক্তাক্ত দেহ নিথর হয়ে পড়ে ছিল রাস্তায়। পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের মৃতদেহের উপরও বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। আঘাতের একপর্যায়ে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করে ছাত্রদল নেতা আমান, যুবদল নেতা জাকির হোসেন জসিম এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী তাদের অনুসারীদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরে এ ঘটনায় কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার জানান, হত্যা মামলার এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে র্যাব। এক পর্যায়ে এজাহারনামীয় আসামি নগরের চান্দগাঁও থানা এলাকায় অবস্থান করার সংবাদ পেয়ে অভিযান চালানো হয়৷ অভিযানে আসামি মুরাদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করে যে, মনোবল ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে পুলিশের উপর হামলায় অংশগ্রহণ করে।
গ্রেপ্তারকৃতর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানা, চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বেআইনি সমাবেশ, নাশকতা, হত্যাচেষ্টাসহ ২টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের এ কর্মকর্তা।