চট্টগ্রামের আটটি আসনে ১৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
রবিবার চট্টগ্রাম-১ আসনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই করা হয়েছে।
মিরসরাইয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাঁর নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১ শতাংশের স্বাক্ষর সম্বলিত যে তালিকা জমা দিয়েছেন, তার মধ্যে ১০ জন ভোটার সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করে তিনজন ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। ওই তিন ভোটার দেশের বাইরে রয়েছেন।
দলীয় কাগজপত্র না থাকায় চট্টগ্রাম ৪ আসন থেকে মনোনয়ন নেওয়া বর্তমান এমপি দিদারুল আলমের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এই আসনে আ’লীগ দলীয় প্রার্থী এস এম আল মামুনের সঙ্গে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন তিনি। যদিও এর আগে নির্বাচন থেকে সরে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া এই আসনের আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমরানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ভুয়া ভোটার দেখানোয়। একই অভিযোগে মো. সালাউদ্দিন নামে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। প্রার্থী হতে সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীর সরকারি চাকরি ছেড়েছেন তিনি।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম ৮ আসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চুর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি নোমান আল মাহমুদের সঙ্গে তারাও হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। ভোটার-সমর্থকদের ভুল তথ্য দেওয়া, স্বাক্ষর না করা, মৃত ভোটারের সাক্ষর, ভোটার বিদেশে থাকাসহ নাম অভিযোগে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এই আসনের আরেক আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী কিষানেরও মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
ঋণখেলাপির অভিযোগে প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মহিবুর রহমান বুলবুলের। এছাড়া মনোনোয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় কংগ্রেসের আরেক প্রার্থী মনজুর হোসেন বাদল প্রস্তাবক ও সমর্থন নাম না দেওয়া এবং হলফনামা, ছবি না থাকায় তার প্রার্থিতা বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ফটিকছড়িতে বাদ পড়া তিন প্রার্থীর মধ্যে দুজনের কোন পদ-পদবী না থাকলেও তারা আওয়ামী ঘরনার। তারা হলেন কানাডা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম নওশের আলী, সাবেক ছাত্রনেতা প্রবাসী মোহাম্মদ শাহজাহান। এছাড়া এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়নও বাতিল হয়। তাদের মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।
সন্দ্বীপে ‘ভুয়া ভোটার’ দেখানোর অভিযোগে জাকের পার্টির নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তজোটের প্রার্থী আমিন রসূলের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
হাটহাজারীতে নাছির হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান নামে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ভোটার-সমর্থকদের তথ্যে গরমিল পাওয়ায় তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
রাউজানের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ভোটার তালিকায় ভুল তথ্য দেওয়ায়।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আয়-ব্যয় হিসেবে কোনো ব্যাংক একাউন্টের নথি জমা না দেওয়ায় খেলাফতে আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তবে তাকে দাবির প্রেক্ষিতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
প্রথম দফা যাচাই-বাছাই শেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটার সমর্থকের তালিকায় গরমিল থাকায় মনোনয়ন পত্রগুলো বাতিল করা হয়। বাতিল হলেও প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কয়েকজন প্রার্থীর নথিপত্র পর্যাপ্ত না থাকায় তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।