ডিসেম্বর ৩, ২০২৪ ৬:৩৯ অপরাহ্ণ

পেটের ডানপাশের ব্যাথার ১০ কারণ


The Blog
দেহঘড়ি
পেটের ডান পাশে ব্যথার ১০ কারণ
পেটের ডান পাশে ব্যথার ১০ কারণ
Subscribe to Notifications
পেটের যেকোনো স্থানে ব্যথা যে কাউকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারে অথবা আতঙ্কগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত লিওনার্ডটাউনের ফ্যামিলি ডক্টর মায়া ফিনকেলস্টোন আশ্বস্ত করছেন, ‘পেটের বেশিরভাগ ব্যথার কারণই বিনাইন বা নিরীহ প্রকৃতির, যেমন- পেশি সংকোচন, গ্যাস জমা ও বদহজম।’ তাই পেটে ব্যথা অনুভব করলে গভীর শ্বাস নিন ও শিথিল হতে চেষ্টা করুন। সম্ভাব্য কারণ শনাক্ত করে ঘরোয়া চিকিৎসা চালানোর পরও পেটের ব্যথা না কমলে অথবা আরো বেড়ে গেলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বিবেচনা করুন। এখানে পেটের ডানপাশে ব্যথা অনুভবের ১০ কারণ আলোচনা করা হলো।

পেটে গ্যাস জমেছে: আপনার পাকস্থলির অবস্থান হচ্ছে নাভির উপরে, তাই প্রায়ক্ষেত্রে গ্যাস জনিত ব্যথা পাকস্থলির অবস্থান বরাবর অথবা বামে অনুভূত হয়। কিন্তু কখনো কখনো এ ব্যথা পেটের ডানদিকে ছড়িয়ে পড়ে, বলেন ডা. ফিনকেলস্টোন। আপনি কি ডায়েটে পরিবর্তন এনেছেন? প্রচুর পরিমাণে এমন খাবার খেয়েছেন (যেমন- ব্রোকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউটস ও ফুলকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজি, শিম বিচি বা বিনস) যা আপনাকে গ্যাসীয় করতে পারে? সময় পরিক্রমায় এ গ্যাস দূর হয়ে যায়। এসময় হাঁটলে উপকার পেতে পারেন।

বদহজম হয়েছে: বদহজম হলে কি খেয়েছেন তা চেক করুন। বদহজমে আপনার পেটের উপরিভাগে ডানদিকে জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা হতে পারে। বদহজম নিজে মারাত্মক নয়- আপনি বেশি পরিমাণে ফাস্ট ফুড, অ্যালকোহল বা কফি ও টমেটোর মতো অ্যাসিডিক খাবার খেলে বদহজম হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজ (এনআইডিডিকে) অনুসারে। বদহজমের ব্যথা নিজে নিজে চলে যায় এবং এ ব্যথা দু’সপ্তাহের মধ্যে ফিরে আসলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

পেশিতে টান পড়েছে: একটি কঠোর কার্ডিও সেশন আপনার পেটের ডানদিকে ব্যথার জন্য দায়ী হতে পারে: সচরাচরের চেয়ে দ্রুত দৌঁড়লে আপনার ডায়াফ্রাম সচরাচরের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হবে, যেখান থেকে মাসল স্পাজম তথা পেশি সংকোচন হতে পারে, বলেন ডা. ফিনকেলস্টোন। তিনি আরো জানান, ‘আপনার বাহুগুলোকে ব্যথার স্থান থেকে দূরে মাথার উপরে স্ট্রেচ করলে স্বস্তি অনুভব করতে পারেন। পরবর্তীতে পেটে পেশি টান জনিত ব্যথা এড়াতে আপনার শ্বাসতন্ত্রকে প্রসারিত করতে হবে- এটা করতে জাম্পিং জ্যাক বা হালকা জগিংয়ের মতো ডায়ানামিক মুভমেন্টের ওয়ার্ম আপ করুন।’

অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে: আপনার পেটের ডানদিকে ব্যথা অনুভব হলে তা অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা সাধারণত নাভির পাশে শুরু হয় এবং পরে তা ডানপেটের নিচে এক-চতুর্থাংশে ছড়িয়ে পড়ে, বলেন ডা. ফিনকেলস্টোন। তিনি আরো জানান, ‘আপনি বসতে বা সমতলভাবে শুতে গেলে খুব অস্বস্তিবোধ করবেন। কিন্তু অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য নিজেকে দোষারোপ করবেন না, কারণ এটি এড়ানোর জন্য কোনো করণীয় নেই।’ আপনার অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে সন্দেহ করলে চিকিৎসকের কাছে যান, নয়তো এটি ফেটে গিয়ে প্রাণ বিপন্ন হতে পারে।

ওভারিয়ান সিস্ট হয়েছে: নারীদের জরায়ুর প্রত্যেক পাশে একটি করে ডিম্বাশয় থাকে। কখনো কখনো এসব ডিম্বাশয়ে তরলপূর্ণ থলে বিকশিত হয়, যাকে ওভারিয়ান সিস্ট বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওভারিয়ান সিস্ট নিজে নিজে চলে যায় এবং প্রায়ক্ষেত্রে নারীরা এ সিস্টের উপসর্গ অনুভব করে না, মায়ো ক্লিনিকের প্রতিবেদন অনুসারে। কিন্তু এ সিস্ট ব্যথায় ভোগানোর মতো যথেষ্ট বড়ও হতে পারে। তাই আপনার ডান ডিম্বাশয়ের সিস্ট বড় হলে পেটের ডানদিকে ব্যথা অনুভূত হবে। হঠাৎ করে তীব্র ব্যথায় ভুগলে অথবা পেট ব্যথার সঙ্গে জ্বর বা বমি হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে ভুলবেন না।

জরায়ুর বাইরে ভ্রুণের বিকাশ হচ্ছে: বিরলক্ষেত্রে একটি নিষিক্ত ডিম্ব জরায়ুর বাইরে বেড়ে ওঠতে পারে, প্রায়ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালিতে। এ ধরনের গর্ভাবস্থাকে ইক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বলে। এ সমস্যাটি কেবলমাত্র নারীদের প্রজনন বয়সে দেখা দেয়। আপনার কনসিভের চেষ্টাকালে পেটের ডান বা বাম পাশে ব্যথা অনুভব করলে চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না। ডা. ফিনকেলস্টোন বলেন, ‘ইক্টোপিক প্রেগন্যান্সির অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে পেটের বাম অথবা ডান পাশে ব্যথা হতে পারে। এ সম্ভাবনা নিশ্চিত বা বাতিল করতে প্রেগন্যান্সি টেস্টের প্রয়োজন হবে।’ ইক্টোপিক প্রেগন্যান্সির অন্যান্য উপসর্গ হচ্ছে ভ্যাজাইনাতে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ অথবা পেলভিকে ব্যথা।

কিডনিতে পাথর হয়েছে: কিডনি পাথরের একটি উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হচ্ছে পিঠের নিম্নভাগে ব্যথা, পেটের নিম্নভাগে ব্যথা অথবা কুঁচকিতে ব্যথা, এনআইডিডিকে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী। এ ব্যথা পেটের একপাশে ছড়াতে পারে, বলেন ডা. ফিনকেলস্টোন। তিনি আরো জানান, ‘এ ব্যথার অবস্থানে পরিবর্তনও আসতে পারে, যার মানে হচ্ছে মূত্রতন্ত্রে কিডনি পাথর একস্থান থেকে অন্যস্থানে সরে যাচ্ছে।’’ কিডনি পাথরের অন্যান্য উপসর্গ হচ্ছে মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, মূত্রে রক্তের উপস্থিতি, বমিভাব ও বমি, আমেরিকান কিডনি ফান্ডের তথ্যানুসারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে: কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও আপনার ডানপেটে ব্যথা হতে পারে। ডা. ফিনকেলস্টোন বলেন, ‘রেক্টাম বা বৃহদান্ত্রের শেষভাগে বেশিরভাগ মল জমা হয় ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য খুব খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে তা এত বেশি শক্ত হয় যে শরীরের বাইরে বের হতে পারে না- এ অবস্থাকে ফেকাল ইম্প্যাকশন বলে।’ ফেকাল ইম্প্যাকশনের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হচ্ছে পেটের পেশি টাইট হয়ে যাওয়া বা ব্যথা অনুভব করা, পেট ফেঁপে যাওয়া, নিচের পিঠে ব্যথা অনুভব করা ও মূত্রাশয়ে চাপ পড়া।

পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে : আপনার পেটের ডানপাশে উপরিভাগে ব্যথা অনুভব করলে এর উৎপত্তি পিত্তপাথর থেকে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে- বিশেষ করে খাবার বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর এ ব্যথা আরো বেড়ে গেলে। ডা. ফিনকেলস্টোন বলেন, ‘আমরা নারীদের পিত্তথলিতে এ পাথর বেশি খুঁজে পাই, বিশেষ করে ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে।’ পিত্তথলি হচ্ছে একটি অর্গান যা পিত্তরস নিঃসরণের মাধ্যমে খাবার হজমে সহায়তা করে। আপনার শরীরে উচ্চ মাত্রায় রক্ত চর্বি ও ইস্ট্রোজেন থাকলে অথবা আপনি অতিরিক্ত স্থূল হলে পিত্তথলিতে পাথর বিকাশের ঝুঁকি বেশি। পিত্তপাথর যে কারণেই হোক না কেন, এ পাথর পিত্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে (গলব্লাডার অ্যাটাক) হঠাৎ পেটের ডানপাশে ব্যথা হতে পারে। গলব্লাডার অ্যাটাকের একটি উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হচ্ছে: পেটের ব্যথা উভয় শোল্ডার ব্লেডের মাঝখানে অথবা ডান কাঁধে ছড়াতে পারে। আপনার এরকম উপসর্গ থাকলে পিত্তথলি অপসারণ করতে সার্জারির প্রয়োজন হবে। এছাড়া পিত্তথলি অপসারণ না করেও মেডিক্যালি পিত্তপাথরের চিকিৎসা করা যায়।

উচ্চ ডোজে ইবুপ্রোফেন সেবন করেছেন: ইবুপ্রোফেনের মতো এনএসএআইডি আপনার পাকস্থলির ভেতরের স্তরকে উক্ত্যক্ত করতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের মতে, ইবুপ্রোফেনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে সাধারণ পেট ব্যথা, বদহজম, বুকজ্বালা ও পেটফাঁপা। আপনার পেটের ডানপাশে ব্যথা অনুভূত হলে কোনো এনএসএআইডি ওষুধ সেবন করেছেন কিনা চেক করুন। অধিক পরিমাণে ইবুপ্রোফেন সেবন করলে তীব্র পেট ব্যথা, বমিভাব, বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে, এমনকি আলসারও হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অথবা ওষুধ সেবনের নির্দেশনা অনুসরণ করে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে পারেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক