এশিয়ার কাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হার। ওই ম্যাচের পর আর হারতে হয়নি দাসুন শানাকার দলকে। একের পর এক জয়ে শেষ পর্যন্ত ২০২২ এর চ্যাম্পিয়ন হয়েই যাত্রা থেমেছে শ্রীলঙ্কার। গতকাল দুবাইয়ের স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মত এশিয়ার সেরা মুকুট নিজেদের করে নিয়েছে দাসুন শানাকার দল। টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভানুকা রাজাপাকসে আর হাসরাঙ্গা ডি সিল্ভার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ১৭০ রানের বড় সংগ্রহ দাড় করায় শ্রীলংকা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কান ঘূর্ণীতে সব উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানে থেমে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।
১৭১ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অতিরিক্ত ১০ রান পায় পাকিস্তান। এরপর দেখে শুনে ধীর গতিতেই রানের ধারা অব্যাহত রাখে দুই ওপেনার বাবর আজম ও রিজওয়ান। ইনিংসের ৪র্থ ওভারে বাবরের উইকেট হারিয়ে প্রথম ধাক্কা খায় পাকিস্তান। প্রমোদ মাধুশানের ২য় বলে মাধুশংকার হাতে ক্যাচ তুলে দেন পাকিস্তানি অধিনায়ক। সাজঘরে ফেরার আগে ৬ বলে ৫ রান করেন বাবর। ঠিক তার পরের বলেই ফখর জামান কে বোল্ড করে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন প্রমোদ মাধুশান। এরপর ব্যটিংয়ে নামা ইফতেখারকে নিয়ে ধীর গতিতে রানের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন ওপেনার রিজওয়ান। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৩৭ রান। ইনিংসের ১৪ তম ওভারে এসে রিজওয়ান-ইফতেখারের ৭১ রানের জুটি ভাঙ্গেন আগের দুই উইকেট নেওয়া বলার প্রমোদ মাধুশান। ৩১ বলে ৩২ রান করা ইফতেখারকে সাজ ঘরে ফেরান তিনি। এরপর মাঠে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি মোহাম্মদ নেওয়াজ। ৯ বলে ৬ রান করে কারুরতেœর বলে প্রমোদ মাধুশানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এ ব্যাটার।
এরপর পরের ওভারেই এক বলের বিরতিতে একই সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামা রেজওয়ান, আসিফ আলি ও খুসদিল শাহকে সাজ ঘরে ফেরত পাঠান হাসরাঙ্গা ডি সিল্ভা। আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে ৫৫ রান করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাকি দুই ব্যাটার ফেরেন ০ রানে। ইংসের ১৮তম ওভারে থিকসেনার বলে আউট হন ৬ বলে ৮ রান করা শাদাব খান। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিছে বাবর আযমরা। শেষ পর্যন্ত সব উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় তারা। এতে ২৩ রানের জয় নিয়ে ষষ্ঠবারের মত এশিয়া কাপের শিরোপা নিজেদের করে নেয় শ্রীলঙ্কা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ইনিংসের প্রথম অর্ধাংশে পাকিস্তানের পেস ও স্পিনে ধুঁকতে থাকলেও ভানুকা রাজাপাকসে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ব্যাটিংয়ের দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছে দাসুন শানাকার দল। পাকিস্তানের পেস ও স্পিনে অর্ধেক ব্যাটিং অর্ডার ধরাশায়ী হওয়ার পর এই দুই ব্যাটারের জুটিতে সেছে ৩৬ বলে ৫৮ রান। হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ার আগে হাসারাঙ্গা করেন ২১ বলে ৩৬ রান। তবে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত ব্যাট করে ৪৫ বলে ৭১ রান করে অপরাজিত ছিলেন রাজাপাকসে। এই বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটারের ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি ও ৩টি ওভার বাউন্ডারি।
তার আগের সব গল্পের নায়ক পাকিস্তানের পেসার ও স্পিনাররা। নাসিম শাহর করা প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে উপড়ে গেছে কুশল মেন্ডিসের স্ট্যাম্প। অপর ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাও পারেননি আগের ম্যাচের ফর্ম এই ম্যাচে টেনে আনতে। ১১ বলে ৮ রান করে হারিস রউফকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে বাবর আজমের তালুবন্দি হন তিনি। চারে নামা দানুশকা গুনাতিলাকাও পারেননি সুবিধা করতে। হারিস রউফের আগুনে গোলায় উপড়ে গেছে এই বামহাতির স্ট্যাম্প। কেবল তিনে ব্যাট করতে নামা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ব্যাটেই দেখা গেছে পাল্টা আক্রমণ। তবে ২১ বলে ২৮ রান করে পার্ট টাইম বোলার ইফতিখার আহমেদের হাতেই সফট ডিসমিসাল হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনিও।
তারপর অধিনায়ক দাসুন শানাকাও পারেননি দলকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করতে। শাদাব খানের স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বোলের ফ্লাইট মিস করে বোল্ড হয়ে মাত্র ২ রান করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। তবে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে ভানুকা রাজাপাকসে চালিয়ে গেছেন পাল্টা আক্রমণ। মোহাম্মদ হাসনাইনকে টার্গেট করা দিয়ে শুরু হয় তাদের পাল্টা আক্রমণ। এরপর পালাক্রমে অন্যান্য বোলারদের ওপরও তারা চালান আক্রমণ। এই দুই ব্যাটারের ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৩৬ বলে ৫৮ রান। এরপর চামিকা করুনারতেকে নিয়ে ৩১ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন রাজাপাকসে। পাকিস্তানের হয়ে হারিস রউফ ৩ টি এবং ইফতেখার, নাসিম শাহ ও শাদাব খান ১টি করে উইকেট নেন।