ইমরান নাজির।
পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা দুই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার দাবি উঠেছে। শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে স্কুলের সামনে তাদের বরখাস্তসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে এ দাবি তুলেন অভিভাবকরা। এসময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধেরও দাবি জানানো হয়।
যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত সেই দুই শিক্ষক রাকিব উদ্দিন ও সুরজিৎ পালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় দুজনই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকরা বলেন, গত ২৭ আগস্ট আমরা সকল অভিভাবককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানালে কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। একই রাতে শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়ের পক্ষ থেকে একটি লিখিত ঘোষণার মাধ্যমে জানানো হয় যে, এই সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে একটি ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। কিন্তু ১৫ জনের সংকট নিরসন কমিটি গঠন করা হলেও তিন কার্যদিবসেও কোন অফিশিয়াল নোটিশ দিয়ে অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করেন নি। উল্টো বিদ্যালয় বন্ধ রেখে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলো।
মানববন্ধনে অভিভাবক আলী ইউসুফ বলেন, ‘আমরা ১৫ জনের সঙ্কট নিরসন কমিটির কোনো প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারছি না। আমরা সংলাপে আগ্রহী, তবে এটি হতে হবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাথে, যাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো সংলাপ প্রস্তাব সচেতন অভিভাবকদের কাছে সময়ক্ষেপণ এবং মূল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মূল্যবান সময় যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, অভিভাবকদের দাবি উত্থাপনের সময় বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে কাম্য নয়। বিদ্যালয় অবিলম্বে খুলে দিয়ে নিয়মিত পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আরেক অভিভাবক সনজীব দে বাবু বলেন, ‘অভিযুক্ত দুই শিক্ষক সুরজিৎ পাল ও রকিব উদ্দিনের অস্থায়ী প্রত্যাহার সচেতন অভিভাবকরা প্রত্যাখ্যান করছেন। এই দুইজনের পাশাপাশি তাদের কাজে ইন্ধনদাতা শিক্ষক ওমর ফারুককেও স্থায়ীভাবে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এছাড়া, সিস্টার বৃন্তা ও সিস্টার শিল্পীকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা শংকিত আমাদের কন্যাদের নিরাপত্তা নিয়ে। তাই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলবো আমাদের ৫টি দাবি অবিলম্বে মেনে নিয়ে বিদ্যালয় খুলে দেয়া হোক।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেক অভিভাবক রীমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিদ্যালয় ও ম্যানেজিং কমিটির প্রতি আমাদের সম্মান ও আস্থা রয়েছে। তবে, যৌন হয়রানির ঘটনাগুলির প্রতিকারে অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা বিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য এবং সুনামের ক্ষতি করছে। এসব ঘটনা নীরবে সমাধান করা যেত, কিন্তু তা না করে বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। আমরা এর অবিলম্বে প্রতিকার চাই। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্যে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই দায়ী থাকবেন।’
অভিভাবক এনী চৌধুরী বলেন, ‘সেন্ট স্কলাস্টিকা বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। গত কয়েক মাস ধরে দেখছি যে, এই বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক সুরজিৎ পাল ও রকিবউদ্দিন; বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, অশালীন আচরণ, এমনকি যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েও এখনো পর্যন্ত শিক্ষাকর্মে যুক্ত রয়েছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অব্যাহত সমর্থন ও দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপের কারণে এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অতিদ্রুত অভিযুক্ত শিক্ষকদের বহিষ্কার করতে হবে এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাথে সচেতন অভিভাবকদের সংলাপের সময় ও স্থান অবিলম্বে নির্ধারণ করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, পাথরঘাটা এলাকার সেন্ট স্কলাসটিকাস বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে ওই স্কুলেরই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ১০ জুন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয় অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরদিন ১১ জুন অভিযুক্ত শিক্ষক রাকিব উদ্দিনকে এবং পরে ২৫ জুন অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক সুরজিৎ পালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।