ওয়াসিম জাফর।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে মোট ৭৩২টি। এর মধ্যে একনলা বন্দুক, দোনলা বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল, শটগান, রিভলবার ও এনপিবি পিস্তল ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত সরকারের আমলে ইস্যু করা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করার ঘোষণা আসার পর ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ত্রগুলো জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও জমা পড়েনি ১৩১টি অস্ত্র।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানায় মোট ৪৫৪টি এবং জেলার ১৫ থানায় মোট ২৭৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এরমধ্যে নগরের ১৬ থানা এলাকায় ইস্যু হওয়া ৩৬১টি বৈধ অস্ত্র জমা পড়লেও জমা পড়েনি ৯৩টি অস্ত্র। অস্ত্রের পাশাপাশি এসব থানায় জমা পড়েছে ১৯ হাজার ৬২৬ রাউন্ড গুলি।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে কোতোয়ালীতে ৭৯টি, বাকলিয়ায় ৫টি, সদরঘাটে ২৬টি, চকবাজারে ৩৫টি, চান্দগাঁওতে ২৪টি, পাঁচলাইশে ৬০টি, খুলশীতে ৯৩টি, বায়েজিদে ৩২টি, ডবলমুরিংয়ে ৩৫টি, হালিশহরে ২১টি, পাহাড়তলীতে ১২টি, আকবরশাহ ৩টি, বন্দরে ১২টি, ইপিজেডে ৭টি, পতেঙ্গায় ৩টি এবং কর্ণফুলী থানা এলাকায় ৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৭৯টি অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে কোতোয়ালী থানা এলাকায়।
নগরের ১৬ থানা এলাকার জমা পড়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের মধ্যে কোতোয়ালীতে ৫৩টি, বাকলিয়ায় ৫টি, সদরঘাটে ২১টি, চকবাজারে ৩১টি, চান্দগাঁওয়ে ২৫টি, পাঁচলাইশে ৯৫টি, খুলশীতে ৫০টি, বায়েজিদ বোস্তামিতে ৮টি, ডবলমুরিংয়ে ১৭টি, হালিশহরে ১৭টি, পাহাড়তলীতে ৯টি, আকবরশাহতে ১টি, বন্দরে ১২টি, ইপিজেডে ৭টি, পতেঙ্গায় ৩টি এবং কর্ণফুলী থানায় ৭টি অস্ত্র জমা পড়েছে।
উল্লেখ্য, খুলশী থানায় অন্যান্য জেলার ২০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র রয়েছে। নোয়াখালী জেলার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২টি অস্ত্র জমা হয়েছে ডবলমুরিং থানায়। পাহাড়তলী থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পশ্চিম থানায় এবং আরেকটি সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় জমা আছে। আকবরশাহ থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র সীতাকুণ্ড থানায় এবং সীতাকুণ্ড থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র আকবরশাহ থানায় জমা হয়েছে। কর্ণফুলী থানার ২টি অস্ত্র ডবলমুরিং থানায় ও ১টি অস্ত্র খুলশী থানায় জমা হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলার ১৫ থানা এলাকায় ইস্যু হওয়া ২৭৮টি অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ২৪০টি অস্ত্র। অর্থাৎ বেঁধে দেওয়া সময়েও জমা পড়েনি ৩৮টি অস্ত্র।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকদের দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টার মধ্যে এসব অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা না দিলে এসব অস্ত্রকেও অবৈধ ঘোষণা করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। তবে এর আগে দেয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বহাল থাকবে, তাদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে হবে না।
এদিকে, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদসহ সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। এ যৌথ অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড ও র্যাব।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানা থেকে মোট ৮১৫টি অস্ত্র লুট করা হয়েছে সরকার পতনের দিন (৫ আগস্ট)। যারমধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৬১৭টি অস্ত্র। এখনো উদ্ধার করা যায়নি ১৯৮টি অস্ত্র। এদিকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৪৯টিই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে চাইনিজ রাইফেল, এসএমজি, শটগান ও পিস্তল।
এছাড়াও ওইদিন লুট হয়েছে ৮২ হাজার ২৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ। এরমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৮৫৮ রাউন্ড গোলাবারুদ