চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে এতদিন মাতামাতি থাকলেও এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসছে উচ্চ পর্যায়ের সভা। আজ দুপুরের পর আয়োজিত এই সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ ১৪টি দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালকও এই সভায় উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। আজকের বৈঠকে সলিমপুর নিয়ে তৈরি করা মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপনের সম্ভাবনাও রয়েছে।
জানা যায়, প্রায় তিন দশক জঙ্গল সলিমপুরকে আলাদা সাম্রাজ্য বানিয়ে রেখেছিল ভূমিদস্যুরা। পরবর্তীতে বেদখল হওয়া বিশালাকার জায়গাটি উদ্ধার করে মহাপরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। যার অংশ হিসেবে এতদিন চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সভা বসে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এরমধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে প্রশাসন। এরপর ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আহবান করা হয়। এ বৈঠকের খবর চট্টগ্রামে আসার পর থেকে জঙ্গল সলিমপুরে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজকের বৈঠকে সরকারের ১৪টি দপ্তরের প্রধানগণ সলিমপুর ইস্যুতে নিজেদের মতামত উপস্থাপন করবেন।
সভায় জননিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এর সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গ্রাম রক্ষা বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত থাকবেন।
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে হাজারো অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এছাড়া এখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠেছে। গত এক মাস ধরে জেলা প্রশাসন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এছাড়া গত ২৪ আগস্ট নির্মাণ সামগ্রীসহ সবধরনের অবৈধ মালামালের প্রবেশ ঠেকাতে এবং গ্যাস পাইপলাইন ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরের চার পয়েন্টের রাস্তা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। একইসঙ্গে জঙ্গল সলিমপুরকে সার্বক্ষণিক কঠোর নজরদারিতে রাখতে বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন এলাকায় চেকপোস্ট এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় দখল হয়ে যাওয়া প্রায় ৩ হাজার ১০০ একর খাস জমি উদ্ধার করেছি। ভূমিদস্যুরা সাধারণ মানুষের কাছে প্লট অনুযায়ী দখল স্বত্ব বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে এবং কয়েকজন কারাগারেও আছেন।
সুন্দর এই জায়গায় পাহাড় ও বন রক্ষা করে পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য আনয়ন ও জীববৈচিত্র রক্ষার্থে পুনরায় কিভাবে জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটিকে সবুজায়নের মাধ্যমে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় তার লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি হতে যাচ্ছে। একটি মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যেমে জঙ্গল সলিমপুর এলাকার অন্ধকার যুগের অবসান ঘটবে।