ডিসেম্বর ৩, ২০২৪ ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু

নিজস্ব প্রতিবেদকচ

চট্টগ্রামের ওয়াসার পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণুর অস্তিত্ব পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (আইইডিসিআর)। সম্প্রতি ৮ শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর পর্যালোচনা ও গবেষণার পর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং রোগীদের ব্যবহৃত পানি ও আশপাশের পরিবেশ পর্যালোচনা এবং গবেষণার পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইইডিসিআর। তবে এই গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলকে মানতে নারাজ চট্টগ্রাম ওয়াসা।

এর আগে উচ্চ আদালতের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার ২৪ পয়েন্টের পানির নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাব, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ল্যাব ও পরিবেশ অধিদফতরের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পরীক্ষা করা পানিতে কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

আইইডিসিআর গবেষণা প্রতিবেদন ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবরে পাঠানো হয়েছে। গত ১৯-২৫ আগস্ট আইইডিসিআর‘র সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে যে অনুসন্ধান চালায় তার তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, হালিশহর, ইপিজেড, পতেঙ্গা ও তৎসন্নিহিত এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অধিবাসীদের ৮০ শতাংশের পানীয় জলের মূল উৎস হিসাবে ওয়াসার পানিকে চিহ্নিত করেছে। আর এই এলাকার অধিবাসীদের ৬৪ শতাংশই কোন প্রকার পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পানি পান ও ব্যবহার করে। প্রাদুর্ভাব এলাকায় গভীর নলকূপ থাকা সত্তে¡ও আয়রনের উপস্থিতি ও লবণাক্ততার দরুণ অধিকাংশ অধিবাসী তা পান করার পরিবর্তে গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক অংশে পরিচ্ছন্নতার অভাব পরিলক্ষিত হয়।
আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত আগস্ট মাসে বিআইটিআইডিতে সর্বমোট ৮৯৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে তদন্ত দল আরও ১৩১ জন ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত করে। বিআইটিআইডিতে ভর্তি রোগী ও কমিউনিটি পর্যায়ে শনাক্তকৃত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় এবং আগস্টের ১৫ তারিখের দিকে সর্বাধিক রোগী আক্রান্ত হয়। তদন্ত চলাকালীন সময়ে ১৯০ জন রোগীর বিস্তারিত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে ৬৬ জন হচ্ছে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আর ৬৪ জন ৩৯ নম্বর এবং ২২ জন ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আক্রান্ত রোগীদের গড় বয়স ২২ বছরের কাছাকাছি। তাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ নারী ও ৫২ শতাংশ পুরুষ। আক্রান্তদের ২৭ শতাংশ পেশায় কল-কারখানার বা পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।

করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে অধিবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয় চট্টগ্রামের সহায়তায় পানি বিশুদ্ধকরণ (ক্লোরিন) ট্যাবলেট বিতরণের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরও সক্রিয় করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নিয়ে ওই ওয়ার্ডসমূহে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা ও নিয়মিত তদারকি করার আহŸান জানানো হয়।
প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম ওয়াসার সঙ্গে আলোচনা করে পানি সরবরাহ লাইন নিয়মিত সংস্কারপূর্বক নিরাপদ রাখার পাশাপাশি পানিতে ক্লোরিনের আদর্শ মাত্রা বজায় রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া পানির জলাধার (ট্যাংক) নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার লক্ষে নগরবাসীকে সচেতন করার কথা বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সাথে কোনো ধরনের কথা না বলেই তারা প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা পুরো শহরে পানি সরবরাহ করি। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আলাদাভাবে সমস্যা থাকার কথা না। তারা কোন জায়গা থেকে পানির নমুনা নিয়েছে সেটাও জানি না। তাছাড়া আমাদের কাছে প্রতিবেদনের কপিও পাঠানো হয়নি। আমরা প্রতিদিন পানি পরীক্ষা করি। শতভাগ নিশ্চিত হয়েই আমরা পানি সরবরাহ করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি সমস্যা থাকে সেটার দায় আমরা নিব না সেটা কেন হবে? কিন্তু আমাদের কোথায় সমস্যা আছে সেটা সুনির্দিষ্ট করে জানতে হবে। আমাদের পানিতে ক্লোরিনের মাত্রা নির্ধারিত থাকে। সহনীয় মাত্রায় ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবেদনে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে সেসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক