- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি এক যুবকের বাম পা উড়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যান পাড়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তের ৩৫ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। আহতের নাম অন্ন্যাথাইং তঞ্চঙ্গ্যা (২৫)। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তঞ্চঙ্গা হেডম্যান পাড়ার মৃত অক্যথাইনের ছেলে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের বরাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ আলম বিডিনিউজকে জানান, সকালে সীমান্ত এলাকায় গরু চড়াতে যান অন্ন্যাথাইংসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এক পর্যায় গরু সীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের অংশে ঢুকে পড়ে। তারা গরু ফিরিয়ে আনতে ওপারে গেলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি চাকমা পাড়া সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলারের সংলগ্ন মিয়ানমারের ১০০ গজ অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের ৯টি পয়েন্টে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী মাটির নিচে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করে রেখেছে। ইতিপূর্বেও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ২০ জনের অধিক বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার এই মাইন বিস্ফোরণেই পা হারিয়েছেন অন্ন্যাথাইং তঞ্চঙ্গ্যা।
থানা পুলিশ জানায়, দুপুরে অন্ন্যাথাইং ও অপর এক যুবক জিরো লাইনের কাঁটাতারের বেড়া এলাকায় যায়। সেখানে হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণে অন্ন্যাথাইং এর বাম পা উড়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাল ও পরে কঙবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে সীমান্তে দায়িত্বরত ৩৪ বিজিবি অধিনায়কের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন, সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। আর স্থানীয়দের সীমান্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার থেকে ফের সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল নিক্ষেপ এবং গোলাগুলি শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে তুমব্রু এলাকায় গোলাগুলি এবং মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দ ভেসে আসছে। এপারে বসবাসরত বাংলাদেশি সীমান্তবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে। ঘুমধুম মৌজা হেডম্যান তানিসা প্রু তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী সীমান্তের ওপারে মিয়ারমার সরকারি বাহিনীর সাথে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মীর (এএ) সশস্ত্র সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি ফের শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে মর্টারশেল নিক্ষেপের বিকট শব্দ ভেসে আসছে বাংলাদেশেও। - লেলিন মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।