ইমরান নাজির।
চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার হাজারি গলি এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকন নিয়ে ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে একপর্যায়ে তাদের ওপর ‘এসিড’ নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া ইট-পাথরের আঘাতে আহত হন আরও পাঁচজন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
‘দুর্বৃত্তদের’ ধরতে হাজারি গলিতে যৌথবাহিনীর অভিযান
এদিকে সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমানও দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন। এ নিয়ে মোট ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
গতকালনমঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একাংশের এ বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ১০টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে সেখানে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। সেখানে ইসকন নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল। ফটোকার্ড সম্বলিত সেই পোস্ট ফের ফেসবুকে শেয়ার করেন হাজারী গলির মিয়া শপিং সেন্টারের একটি দোকানের মালিক। আর সেই পোস্টে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়দের একাংশ দোকানটি ভাঙচুর করেন এবং ওই ব্যবসায়ীর ওপর আক্রমণের চেষ্টা চালান।
হাজারি গলির এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিকেল ৪টার দিকে ওই ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। একপর্যায়ে ওই দোকান ভাঙচুর করেন তারা। একইসাথে পোস্টকারীকে তারা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী চট্রলার কন্ঠকে জানান, বিক্ষোভরতদের সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা নিবৃত্ত করতে যান। একপর্যায়ে তাদের ওপর চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ‘এসিড’ ছুঁড়ে মারা হয়। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রামের স্থানীয় গণমাধ্যমের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে জানান, বিক্ষুব্ধদের নিবৃত্ত করার সময় সেনাসদস্যরা ধাওয়া দিয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চড়াও হন। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। নগরের কেসিদে রোডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে আক্রমণকারীরা হাজারি গলির ভেতরে রয়েছে। তারা ভেতর থেকে ‘এসিড’ নিক্ষেপ করেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ চট্রলার কন্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘হাজারি গলির ওসমান গণি নামে এক ব্যবসায়ী একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। পোস্টটি ইসকন সম্পৃক্ত। যা নিয়ে কিছু লোকজন সংক্ষুব্ধ ছিল। ওই ব্যবসায়ীকে আক্রমণ করার চেষ্টা করা হলে পুলিশ গিয়ে আক্রমণকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে যারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিল তাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। তাদের আক্রমণে আমাদের ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এর মধ্যে একজন এসিড আক্রান্ত আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে আটকের অভিযান চলছে। আর যে ব্যবসায়ীকে আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছিল তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিসের প্রেক্ষিতে কি হলো— পুরো বিষয়টি তদন্ত করে এবং যারা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো