জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ইসকনের কোনো ফাঁদে পা না দেওয়ার আহবান জানিয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার (৮ নভেম্বর) জুমার নামাজ শেষে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বরে হাজারী গলিতে মুসলিম দোকানদারের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে এ আহবান জানান হেফাজত নেতারা।
সমাবেশে সংগঠনের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক মওলানা কামরুল ইসলাম কাশেমী বলেন, ‘হেফাজত ইসলামের দায়িত্ব হচ্ছে মুসলিম সমাজের কাছে তার করণীয় কি, তা অবগত করা। যখন কোনো মোমিন আক্রান্ত হয়, তখন তার পাশে যদি অন্য মোমিনরা না দাঁড়ায়; তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব আসে। আমরা সকলেই একটা শান্তিপূর্ণ সমাজ কামনা করি। এ দায় থেকে হেফাজত ইসলাম আজকের বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করেছে।’
একতা যেন কোনোভাবে নষ্ট না হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের শাসনে যে ফ্যাসিবাদ ও নৈরাজ্য ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছিলো, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তা নসাৎ করে দিয়েছে। আমাদের প্রধানতম দায়িত্ব হচ্ছে, আমরা যে ষোল বছর নৈরাজ্যকর অবস্থাতে ছিলাম, এখন যে মুক্ত বাতাসে কথা বলতে পারছি, এই অধিকার যেন আবার হারিয়ে না ফেলি। আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেটা ধরে রাখতে হবে। কোনো কারণে, কোনো উস্কানিতে তা যেন বিনষ্ট না হয়। আমাদের একতা নষ্ট করতে ভিতরে- বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
সব ক্রাইসিসে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার কথা জানিয়ে কাশেমী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পতনের পর থেকে বাংলাদেশে যতগুলো ক্রাইসিস সামনে আসছে, আমরা তাদের অন্তর্নিহিত খবর নিয়ে দেখতে পাই, এগুলোর পিছনে আওয়ামী লীগ জড়িত। তাদের দোসররা জড়িত, ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত। যখনই আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা দেখবো, ঐক্যবদ্ধভাবে সেগুলো প্রতিহত করবো। এই বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করার মধ্য দিয়ে আমাদের একতা অটুট থাকবে।’
ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে এ নেতা বলেন, ‘ইসকন নিয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। ইসকন বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব ইসকন সনাতনের কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন একটি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের লালিত-পালিত একটি জঙ্গি সংগঠন। তাই আমাদের হিন্দু ভাইদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি, আপনারা ইসকনের ফাঁদে পা দিবেন না।’
ইসকন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত্রু উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের সনাতন ভাইয়েরা ইসকনের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েছেন। আমি কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি। ইসকনের অন্যতম নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, হাটহাজারী মেখলের পুণ্ডরিক ধামের প্রধান। সেখানে এই ইসকনরা আমাদের হিন্দু ভাইদের উচ্ছেদ করে দিয়েছে। কমপক্ষে ৫০ জন হিন্দু ভাইদের উচ্ছেদ করে তাদের জায়গা-জমি জবর দখল করে নিয়েছে।’
‘সেখানে উদয়ন নামে আমাদের হিন্দু ভাইদের একটি সংগঠন ছিল, এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস উদয়ন সংগঠনটিকে উচ্ছেদ করে দিয়েছে। সেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বিদ্যানিকেতন ছিলো, তারা সেটিও উচ্ছেদ করে দিয়েছে। হিন্দুদের সমস্ত পূজাগুলো আগে সেখানে হতো, এখন সেখানে লালার পূজা হয়। অন্যকোনো পূজা হয় না সেখানে। এই ইসকনরা শুধু বাংলাদেশের শত্রু নয়, শুধু ইসলামের শত্রু নয়, ওরা আমাদের সনাতন ভাইদেরও শত্রু। অতএব সনাতন ভাইয়েরা, আপনারা ইসকনদের কোনো ফাঁদে পা দিবেন না। এটাই হলো আমাদের সুস্পষ্ট বার্তা।’
হেফাজত ইসলাম চট্টগ্রামের নেতা আনোয়ারুল রব্বানি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এই ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ আরও বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির সাজিদুর রহমান, সহদায়িক প্রধান সম্পাদক মওলানা সাঈমুল্লাহ প্রমুখ।