ডিসেম্বর ৪, ২০২৪ ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়

মিজানুর রহমান।

নির্বাচন দিয়েই আওয়ামী লীগতে চিরতরে বাতিল করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। আওয়ামী লীগকে যদি বাতিল করতে হয় রাজনৈতিকভাবে, সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে বাতিল করা সবচেয়ে সহজ। সেই বাতিল হবে পার্মানেন্ট বাতিল। অন্য বাতিলে কাজ হবে না।’

আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে নগরের ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্সে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আলোচনা সভা, পেশাজীবি সমাবেশ এবং নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

nagad
nagad

আমীর খসরু বলেন, ‘অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় বাতিলে গেলে সেই বাতিল কিন্তু সাময়িক কাজ করবে; দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে না। জনগণ যখন বাতিল করবে আওয়ামী লীগকে; সেটাই হচ্ছে আসল বাতিল। আমাদের ওদিকে যেতে হবে। সকলের অধিকার সমুন্নত রেখে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে। কারণ আমরা তো অধিকারের জন্য লড়াই করেছি, জীবন দিয়েছি, জেলে গিয়েছি। সেটা কেড়ে নেওয়ার অধিকার আবার কারো নেই।’

বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পাবার অপেক্ষায় রয়েছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পাবার আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা করছে, তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অপেক্ষা করছে, নির্বাচিত সংসদ, সরকার গঠনের জন্য অপেক্ষা করছে, যে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার জনগণের কাছে জবাব দেয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। অন্য কোনো সরকার দায়বদ্ধ থাকবে না। কারণ, তাদের তো জনগণের কাছে যেতে হবে না। বিএনপিকে যেতে হবে। যারা রাজনীতি করে তাদের যেতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে বাংলাদেশকে অতিস্বত্তর একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে, সরকার নির্বাচিত করতে হবে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।

সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনী সংস্কার। সব কথা শুনছি, নির্বাচনী সংস্কারের কথা শুনছি না। একটা কমিশন গঠন করেছে, আমরা খুশি হয়েছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে, আমরা অপেক্ষা করছি। আমরাও কিন্তু নির্বাচনী সংস্কারের জন্য সবকিছু তৈরি করে রেখেছি। আমাদের সংস্কার তো আজকের না! বাংলাদেশ আগামী দিনে কি হবে; সেটা নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে কাজ করছি।’

বিএনপি ক্ষমতায় বসার পর সংস্কার কাজ শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় যেদিন বিএনপি বসবে, সেদিন থেকে সংস্কার কাজ শুরু হবে। বিচার বিভাগের সংস্কার, যেদিন থেকে বিএনপি বসবে ওইদিন থেকে শুরু হবে। একটা দিনও আমরা নষ্ট করবো না। শিক্ষাখাত, ব্যবসায়ীদের বিষয়, সব খাতের সংস্কার, সবকিছু প্রস্তুত। ডে-ওয়ান থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আর কারা কি করবে আমরা জানি না, আমরা কি করবো সেটা আমরা জানি। আগামী দিনে বিএনপি সরকার গঠন করলে, বাংলাদেশ নিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, দেশকে সেখানে নিয়ে যাবে।’

সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিমের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সংবর্ধিত অতিথি চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্ট ২০২৪ একটি অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে স্বৈরাচার পালিয়েছে। কিন্তু তার দোসররা আমাদের মাঝে আছে, সমাজে আছে। এ দোসরদের যদি আমরা চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে সত্যিকার অর্থে যে মূল্যবোধ আবু সাইদ, মুগ্ধ, ইলিয়াছ আলী, চৌধুরী আলম, কোনো কিছুই আদায় হবে না। যদি দোসরদের আইনের কাঠগড়ায় না আনতে পারেন। তাদের ক্ষমতার যে দম্ভ অর্থাৎ মানুষের লুণ্ঠণকৃত টাকা, আইন-বেইনী অস্ত্র, সেগুলো যদি উদ্ধার এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে না পারে তাহলে সকল শহীদের রক্ত বৃথা যেতে বাধ্য।’

শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এখন নাটক করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কোনো লজ্জা নেই পালিয়ে গেলেন, এরপরও অডিও দেন ভিডিও দেন বিভিন্ন কথা বলেন কতক্ষণ পরে বলেন স্থগিত করা হলো, অর্থাৎ নাটক চলছে। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র থেমে নেই।’

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় জাতি যখন নেতৃত্ব শূন্য দিশেহারা তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। এমনি এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে তিনি পাক বাহীনির বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয় আসলেই জিয়াউর রহমানের নাম আসবে। শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক। কেউ চাইলেই এই ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ ইতিহাস লিখেন ইতিহাসবিদরা। রাজনীতিবিদরা ইতিহাস রচনা করলে সেটা হয় প্রোপাগান্ডা।’

এতে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, ড্যাব চমেক শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দীন, সিএমইউজে সভাপতি সাংবাদিক মো. শাহনওয়াজ, চট্টগ্রাম জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দীন আহমেদ মানিক, ড্যাব মহানগর সভাপতি অধ্যাপক ডা. আব্বাস উদ্দীন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি এম এ সাফা চৌধুরী, ব্যাংকার মেহরাব হোসেন খান প্রমুখ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক