ওয়াসিম জাফর।
চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার লালদিঘী সিনেমা প্যালেস এলাকায় মধ্যরাতে এক নারীর ব্যাগ তল্লাশি করতে গিয়ে জনরোষের শিকার হয়েছেন দুই ‘ছাত্র’। উপস্থিত জনতা তাদেরকে পিটুনি দিতে চাইলে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে।
এদিকে, সমন্বয়ক পরিচয়ে রাতের বেলা নারীর ব্যাগ তল্লাশির ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরাও। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দাবি—ওই দুই ছাত্র ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি তাদের চেনেন।
সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিনেমা প্যালেস এলাকা থেকে ওই দুই ছাত্রকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের নাম সাব্বির ও রায়হান। এদের মধ্যে রায়হান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে একটি সূত্রে জানা গেলেও অপরজনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করে ডাক-চিৎকার দিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে থামান সাব্বির ও রায়হান। এ সময় তারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেন এবং ওই নারীকে যৌনকর্মী সন্দেহে ব্যাগ তল্লাশি করতে থাকেন। কিন্তু তার ব্যাগে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে সেখানে ওই নারীর স্বামী উপস্থিত হলে তাদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে আরও লোক জড়ো হলে পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলে থাকা আব্দুর রহিম সবুর নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘এভাবে যদি রাত-বিরাতে যে কারো ব্যাগ চেক করে সমন্বয়ক পরিচয়ে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কি? তাও আবার নারীর ব্যাগ! এটার জন্য কি এই ছাত্ররা অথরাইজড? তারা এই এখতিয়ার কই পেলো। এরকমভাবেই যে কেউ ছিনতাইয়ের শিকারও তো হতে পারে।’
জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘সিনেমা প্যালেস এলাকায় যৌনকর্মী সন্দেহে কিছু নারীকে তাড়া করে ওই দুই ছাত্র। এ সময় এক নারী একটি হোটেলে আশ্রয় নেন। তার পেছন পেছন দুই ছাত্র হোটেলে উঠলেও তাকে আর খুঁজে পায়নি। হোটেল থেকে নেমে একটি বাসের পেছনে বোরকা পরিহিত আরেকটি নারীকে দেখে তারা সন্দেহ করে তাড়া করা সেই নারী ভেবে। পরে তার ব্যাগে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী রয়েছে কিনা—তা তল্লাশি করে দেখে তারা।’
ওসি বলেন, ‘একপর্যায়ে ওই নারীর স্বামী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেখানে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ লোক জড়ো হয়ে যায়। জনতা ওই দুজনকে মারতে উদ্যত হলে খবর পেয়ে মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দুই ছাত্রকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তারা দুজনেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।’
‘ওই নারী এবং তার স্বামীও থানায় এসেছিলেন। তাদের অভিযোগ না থাকায় দুই ছাত্রের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘এরা ভাল সেন্সেই কাজটি করেছে। তারা খারাপ কিছু করতে না দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই করেছে। তারা বিভিন্ন সময় মাদকবিরোধী কাজও করে থাকে। আমি চিনি তাদেরকে। আগেও এসেছিল তারা। সমন্বয়ক রাসেলের সাথেও মুঠোফোনে কথা হয়েছে।’
এখতিয়ার বহির্ভূত তল্লাশি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া তল্লাশির এখতিয়ার কারো নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তবে ওই দুই ছাত্র সমন্বয়ক নন নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রদের কাজ এখন পড়ার টেবিলে এবং পতিত শক্তির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। ছাত্রদের কাজ তো কারও ব্যাগ তল্লাশি করা নয়। আর যে দুজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে তারা সমন্বয়কও নন। আমি তাদেরকে ওভাবে চিনিও না।’