অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীতে আওয়ামী মদদপুষ্টদের নিয়োগ, প্রশাসন কর্তৃক ছাত্র হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।
এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীতে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী এবং ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিনকে নিয়োগের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে করা সমাবেশ থেকে হেফাজত নেতাকর্মীদের আটকের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের কাছে জবাব চেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরের জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
মানববন্ধনে রাসেল আহমেদ বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট পতিত শক্তি বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসরেরা তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পতিত শক্তির দালালেরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে হুঁশিয়ারি দিতে চাই, বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ এখনো রাজপথে আছে। আপনারা কোনোভাবে পতিত স্বৈরাচার শক্তির দালালদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্থান দিতে পারেন না।’
KSRM
KSRM
চট্টগ্রামে হেফাজতকর্মীদের আটকের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যেই শাহবাগে আমাদের দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আওয়াজ দিয়েছিল তখন হেফাজতের বিরুদ্ধে যে বর্বরচিত হত্যাকাণ্ড সেটা আপনারা জানেন। সেই শাপলা চত্ত্বরে যাদের নেতৃত্বে আন্দোলন হয়েছিল তাদের কর্মীরা যখন চট্টগ্রাম থেকে শাহবাগী ফারুকীকে উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে বরখাস্তের আওয়াজ তোলে তখন তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আমাদের দুই হাজার ভাই-বোনদের যারা নির্মমভাবে শহীদ করেছে তাদেরকে পুলিশ প্রশাসন এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি। কিন্তু যারা পতিত শক্তির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে তাদের পাঁচজনকে তারা আটক করেছে। এই গ্রেপ্তারের সংখ্যা কখন ৫শ, কখন ১ হাজার হবে আমরা জানি না।’
প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে সমন্বয়ক রাসেল বলেন, ‘সমস্যা-ষড়যন্ত্র যারা করার পায়তারা করছে যারা করছে এখান থেকে জানিয়ে দিতে চাই, আপনারা কোনোভাবেই স্বৈরাচারের দোসরের দালাল হয়ে কাজ করবেন না। যদি করেন তাহলে আপনাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমরা আপনাদের সে দায়িত্ব থেকে নামাতে কালক্ষেপণ করবো না।’
উত্তরবঙ্গ বৈষম্যের শিকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, রাজপথে নেমেছিলাম, রক্ত দিয়েছিলাম, আমার ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছিল—সেই বৈষম্য এখনো হচ্ছে। আপনারা জানেন, আমাদের উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা থেকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে একজনও নেই। এ কেমন বৈষম্য! আমরা এ বৈষম্যের জন্য তো আন্দোলন করি নাই, রক্ত দিই নাই। তাহলে কেন উত্তরবঙ্গ সবসময় অবহেলিত থাকবে? আমরা সক্ষমতার সুষম বণ্টণ চাই। আপনাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিষ্ঠার সাথে পালন করুন। কোনোভাবেই পতিত শক্তির স্বৈরাচারের দালালদের উপদেষ্টামন্ডলীতে স্থান দিতে পারেন না, পারেন না, পারেন না। আমরা কোনোভাবেই এই ফ্যাসিস্টের দালালকে উপদেষ্টামন্ডলীতে চাই না।’
প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাসেল আহমেদ বলেন, ‘যারা গতকাল হেফাজতের কর্মীদের আটক করেছে অবশ্যই তাদেরকে জবাব দিতে হবে। এবং অবশ্যই কেন আটক করা হয়েছে, কার মদদে আটক করা হয়েছে আমরা এর সুষ্ঠ তদন্ত চাই। এখন পর্যন্ত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দালালদেরকে; যারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদেরকে কোনোভাবেই প্রশাসন আটক করতে পারে নাই। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা শার্টের বোতাম খুলে রাজপথে রাতের আঁধারে হেঁটে বেড়াচ্ছে। অথচ এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিবি এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিশ্চুপ হয়ে তা দেখছে এবং হয়তো হাসছে। আমরা আপনাদের সেই হাসি খুব দ্রুত বন্ধ করবো। এই বাংলাদেশকে আপনারা কোনোভাবে পতিত স্বৈরাচারের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন আমরা আপনাদেরকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নামাবো ‘
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আরও একটি বার্তা দিয়ে চাই, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যদি আওয়ামী লীগের দোসরদেরকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করেন, যদি ফ্যাসিবাদের মূর্তপ্রতীক যার ৭২ থেকে ৭৫-এর ইতিহাস আমরা জানি না। সেই শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেশের বিভিন্ন অফিস-আদালত এবং প্রশাসনিক ভবনে কিভাবে রাখা হয়েছে? যারা বলছেন, তার ছবি কেন দূরে সরানো হলো তাদেরকে হুঁশিয়ার করতে চাই, আপনারা কোনোভাবে মুজিববাদকে সাপোর্ট করতে পারেন না। এই মুজিববাদের যারা মুরিদ, আওয়ামী লীগকে যারা ধর্ম মনে করে, শেখ মুজিবকে যারা দেবতা মনে করে—তাদেরকে হুঁশিয়ার করে বলতেও চাই, শেখ মুজিব ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত যেভাবে নির্যাতন চালিয়েছে আপনারা যদি কেউ তাকে আর দেশের ধর্ম কিংবা দেবতা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন তাহলে তাদেরকে আমরা দমন করবো।’
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের আকার আরেক দফায় বাড়ানো হয় গত রবিবার। এদিন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম। নতুন নিয়োগ পাওয়া তিন উপদেষ্টার মধ্যে ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে। কেউ কেউ উপদেষ্টা বাছাইয়ে ‘অঞ্চল প্রীতির’ অভিযোগ তুলেছেন। অনেকে আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এরইমধ্যে ওই দুজনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা করার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল (সোমবার) নগরের কোতোয়ালী থানার জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে ‘তাওহিদী ছাত্র জনতা’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করে হেফাজত ইসলামের কয়েকজন নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে ৬ জনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কর্মী সন্দেহে পুলিশ আটক করলেও পরে হেফাজত ইসলামের ‘কর্মী’ হিসেবে শনাক্ত করে। পরে মুচলেকা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি হারুন ইজহারের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।